বিল্লাল ঢালী :
মোঃ রইস উদ্দীন চৌধুরী। সাধারণ একজন দোকান কর্মচারী । কোনো মতে চলছে জীবন। অথচ একসময় প্রয়োজন মতো সম্পদ ছিলো। ব্যবসা ছিলো। সাজানো গুছানো জীবন-সংসার ছিলো। কি এক ভুল জীবনের গতিপথ পাল্টে গেছে তার। রইস উদ্দীন চাঁদপুর শহরের ওর্য়ালেছ এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘ ১৫ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন। প্রবাস জীবন তারপর দেশে এসে কয়েক বছর আরাম আয়েশেই কেটেছিলো সময়। কিন্তু এখন আর সেই রইস উদ্দীনের জৌলুস নেই। সুর্দশন রইস উদ্দীনের শরীর এখন নেতিয়ে পড়েছে। ভাঁজ পড়েছে কপালে। মুখে খোঁচা খোঁচা সাদাকালো দাঁড়ির মিশেল। চেহারায় ফুটে উঠেছে চরম ক্লান্তির ছাপ।
আক্ষেপের সুরে রইস উদ্দীন বলেন, দীর্ঘ পনের বছর প্রবাস জীবন কাটিয়েছি। ভেবেছি দেশে এসে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করবো। কিন্তু তা আর হলো কই? ব্যবাসায় মার খেয়ে এখন পথে বসার অবস্থা। তাই বেকার সময় না কাটিয়ে একটি দোকানে কর্মচারীর কাজ করছি। টাউট বাটপারির চেয়ে ভালো কাজই করছেন বলে মনে করেন রইস উদ্দীন।
রইস উদ্দীনের বাবা জালাল আহমেদ চৌধুরী এবং মা রিজিয়া খাতুন অনেক আগেই পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। দুই ভাই দুই বোনের সবাই ভালো আছেন এক রইস উদ্দীন ছাড়া। দুই মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রী নাসরিন জাহানকে নিয়ে সংসার। অবশ্য মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। ছেলে এখনো পড়ালেখা করছে।
এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপকালে রইস উদ্দীন বলেন, ১৯৮৮ সালে সৌদি আরবে যাই। সেখানে একটি এগ্রিকালচার কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতাম। বিদেশে থাকাবস্থায় ভাবতাম একসময় বিদেশ ছেড়ে দেবো। দেশে গিয়ে ব্যবসা বানিজ্য করে জীবন চালাবো। তাই প্রবাসের প্রথম জীবনেই রাজধানী ঢাকার শনিরআখড়ায় ৪কাঠা জমি কিনে রাখি। তারপর ২০০৩ সালে একবারে দেশে চলে আসি। দেশে আসার পর ঢাকার জায়গাটুকু বিক্রি করে চাঁদপুর শহরের মীর শপিং কমপ্লেক্সে দোকান দিই। তখন মীর শপিং কমপ্লেক্স ওতো জমে উঠেনি। তাই মাসে মাসে লস গুণতে হলো। এভাবে একসময় চালান হারিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হলো। তারপর শুরু হলো সংগ্রামী জীবন। জীবনের সঞ্চিত পূঁজি হারিয়ে আমি এখন খুব অসহায়। অথচ এমন হবে কখনো তা ভাবিনি।
রইস উদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, ঢাকার জমি বিক্রি করা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তবে কাজকে কখনো ছোট মনে করি না। কাজ কাজই। জীবনের এ প্রান্তে এসে যোগফল মিলেতে হিমশিম খাচ্ছেন রইস উদ্দীন। তবে একমাত্র ছেলে যেন অন্তত একটা ভালো চাকুরি পায় এ আশা নিয়ে বুক বেঁধে আছেন তিনি।
রইস উদ্দীন ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করেন। নিজের ভাবনার মাঝে দেশ ভাবনাও যে নেই তা কিন্তু নয়। রইস উদ্দীন বলেন, আমাদের দেশে এখন প্রচুর উন্নয়ন হচ্ছে। রাস্তা-ঘাট সব কিছুরই উন্নয়ন হচ্ছে। শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে কম। সরকারকে অবশ্যই কর্মসংস্থনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। দেশের জনগণকে সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে।