নজরুল ইসলাম আতিক:
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। শহরের ওর্য়ালেছ মোড়ে একটি ঝুঁড়িতে কিছু দেশী ফল (ডেউয়া) নিয়ে বসে আছে। ক্রেতার অপেক্ষা। নাম মোঃ সিফায়েদ ইসলাম। বয়স আট কি দশ। এমন অবুজ শিশুকে দেখলে যে কারোই ইচ্ছে করবে একটু আদর করতে। এই সময় তার পরিবারের সাথে ঘরে থাকার কথা। মা-বাবা অথবা বড় ভাই বোন এতোক্ষণে পড়ার টেবিলে বসার তাড়া দিতো। কিন্তু শিশু সিফায়াদের বেলায় জীবন গল্প একটু ভিন্ন। সংসারের বাড়তি আয়ের আশায় বাাব আবদুল কাদিরকে সহায়তা করতে রাস্তার পাশে অবস্থান তার।
শিশু সিফায়েদের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, তার মা গৃহিনী। ওয়ারলেস সিটি কলেজের পিছনে বাসা। মা-বাবা আর দুই ভাই মিলে সংসার। বড় ভাইয়ের সাইফুল ইসলাম। মঠখোলা একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। ইতিমধ্যে কুরআন মুখস্ত (হেফজো) শেষ করেছে। করোনায় মাদ্রাসা বন্ধ তাই বাসায় আছে। সিফায়েদ পড়াশোনা করে বাসস্ট্যান্ডে একটি দাখিল মাদ্রাসায়। দুই ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বাবা। তাই ছোট ছেলে সিফায়েদকে দিয়ে রাস্তার পাশে ফল বিক্রি করাচ্ছেন বাড়তি উপার্জনের আশায়।
সিফায়েদের বাবা আবদুল কাদির বলেন, ত্রিশ বছর যাবৎ হকারি করি। আগে গ্রামে হেঁটে হেঁটে হকারি করতাম। এখন আর গ্রামে যাই না। ওয়ারলেস মোড়ে রাস্তার পাশে বসে হকারি করি। তা দিয়ে কোনমতে সংসার চালাই। এতো বছর হকারি করে ওয়ারলেসে এক শতাংশ জায়গা কিনে ঘর করেছি। সম্বল বলতে এটুকুই। বাবা মার কিছু জায়গা ছিল। সেগুলো বাবা বেঁচে থাকতেই বিক্রি করে গেছেন। বলছিলেন আব্দুল কাদির।
আব্দুল কাদির আরো বলেন, হকারি করে সংসার ভালোই চলছিল। ছেলে দুইটা বড় হচ্ছে। পড়ালেখা করতে দিছি। পড়ালেখা করাইতে ওতো খরচ লাগে। আমার একার রোজগারে কুল পাইতেছি না। বড় পোলা হেফজো পাশ করছে। কাজ খুঁজতেছি। কাজে দেওয়ার লাইগা। কিন্তু কেউ কাজ দেয় না। করোনা ভাইরাসের কারণে যার কাছে যাই সেই করে। এখন বাজার ভালো না। কাজের জন্য লোক লাগবো না। যারা কাজ করে উল্টা তাদেরকেই নাকি কাজ থেকে বাদ দিতেছে। হেফজো পাস করা বড় পোলা হকারি করব মনরে বুঝাইতে পারি না। তাই বাধ্য হইয়া ছোট পোলাডারে নিজের লগে রাইখা দিছি।
করোনাভাইরাস এর এই সময় ছোট ছেলেকে হকারি করার জন্য বসাইছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস আল্লায় দিছে তয় আমাগাতো চলতে অইবো। আল্লাহ মাফ করলেই মাফ হবে। এছাড়া উপায় নাই। আমাগো চলতে তো হইবো। তবে সাবধানে থাকতে হইব।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেন, সরকার করোনা ভাইরাস দূর করতে যা করতাছে খুব ভালো। আমাদের উচিত সরকারের সব আদেশ মাইনা চলা। আদেশ মানা না মানা আমাদের বুঝ। মানলে আমাদের সবার ভালো হইবো।