এইচএম জাকির:
বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাস-এর প্রভাব বাংলাদেশকে আক্রমণ করে মার্চ মাসে। ৮ মার্চ বিশ্বে যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোভিড-১৯ রোগে ৩৬০০ মানুষ মারা যায়, ঠিক তখন অর্থাৎ ৮ মার্চ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ৩ জন কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয়। যাদের ২ জন ভিন্ন পরিবারের ইতালি প্রবাসী পুরুষ ও ১ জন এদের ১ জন দ্বারা সংক্রমিত তার পরিবারের নারী সদস্য। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জানুয়ারী-২০২০ হতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রস্তুতি নিলেও মূলত পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু হয় ৩ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বিশেষ মিটিং-এর পর। উক্ত তারিখ পর্যন্ত ৫৪ জনের করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় রোগ ধরা না পড়লেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মিটিং-এ সিদ্ধান্ত দেন যেভাবেই হোক করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতেই হবে। এজন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এরপর হতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জোড়ালোভাবে কাজ শুরু করে।
৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সনাক্তের পর হতে ধীরে ধীরে কোভিড-১৯ রোগী বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে মৃত্যুর মিছিলেও বাংলাদেশ নাম লেখায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর-এর তথ্য মতে বাংলাদেশে ১৮ মার্চ যখন কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৪ দাঁড়ালো, ঠিক সেদিনই কোভিড-১৯ রোগে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা গণনা শুরু হলো। ২৬ মার্চ হতে সরকারিভাবে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর জেলায় জেলায় লকডাউন ঘোষণা আসে।
লম্বা সাধারণ ছুটি ও লকডাউন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত হানে। বেসরকারি কর্মজীবিরা চাকুরি হারাতে শুরু করে। গার্মেন্ট
স, মেইল, ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যায়। সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ হয়। হকার, কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও টিউশনি নির্ভর করে ম্যাচে থেকে পড়াশোনা করা উচ্চ শিক্ষার্থীসহ নানান শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনে নেমে আসে অভুক্তের ছায়া। জনজীবন বাসা-বাড়িতে বন্দি হয়ে পড়ে। সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও একই অবস্থা। এ জেলায় ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার দিন বিকেল হতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবেলা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি চাঁদপুরের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক চাঁদপুর জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করা হলেও তার কিছুদিন পূর্বেই চাঁদপুরের মান্যবর জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান-এর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় চাঁদপুরবাসীর জন্য করোনাকালীন নানা উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
‘সততা স্টোর’ নামে ভর্তুকি দিয়ে বাজারের চেয়েও কম
মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে উদ্ভাবনী কার্যক্রম শুরু করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। এর কিছুদিন পরই মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জেলা প্রশাসনের সাথে স্বেচ্ছায় কাজ করতে আগ্রহী, চাঁদপুর শহরে বসবাসকারী এবং নিজের মোটরসাইকেল আছে এরূপ স্বেচ্ছাসেবকদের আমন্ত্রণ জানান। তাঁর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ৪০ জন বাইকার ছুটে আসেন স্বেচ্ছায় কাজ করার আগ্রহ নিয়ে। এরপর থেকেই জেলা প্রশাসন চাঁদপুর করোনাকালে নানান উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ করে।
উদ্ভাবনী কার্যক্রমগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নে তুলে ধরা হলো :
সততা স্টোর :
চাঁদপুরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য ৩ ফুট দূরত্বের গোল বৃত্তে অবস্থান করে ভর্তুকি মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয় ‘সততা স্টোর’ দিয়ে। এটি প্রথমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু হলেও ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় পরবর্তীতে চাঁদপুর শহরের আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে এটি জেলার অন্যান্য উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
ত্রাণ যাবে বাড়ি/উপহার যাবে বাড়ি :
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। এই শ্রেণির মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ যারা চক্ষু লজ্জায় কাহারো কাছে হাত পাততে বা ত্রাণ চাইতে পারেন না, তাদের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দুটি হটলাইন নাম্বার চালু করা হয়। হটলাইন নাম্বারে প্রাপ্ত কলের ঠিকানা অনুযায়ী বাইকার স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য পৌঁছে দেয়া হয়। এটি প্রথমে ‘ত্রাণ যাবে বাড়ি’ নামে শুরু হলেও পরবর্তীতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার যাবে বাড়ি’ নামে রূপান্তরিত করা হয়। এ কাজে জেলা প্রশাসনের সাথে মাঠে ৪০ জন বাইকার এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ১০ জনসহ মোট ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত ছিল।
লকডাউন বাস্তবায়ন :
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের সীমান্তবর্তী জেলা এবং যাতায়াত দূরত্ব কম এবং সড়ক ও নৌপথে দ্রুত যাতায়াত সুবিধা থাকায় প্রথম দিকের বেশি সংক্রমিত এ দুই জেলা হতে করোনা উপসর্গসহ সাধারণ লোকজন চাঁদপুরে আসা শুরু করে। পরবর্তীতে আগতদের মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায় এবং চাঁদপুরের প্রথম করোনা পজেটিভ রোগীও নারায়ণগঞ্জ হতে নৌ পথে মতলব উত্তরে আসে। ধীরে ধীরে করোনা ভাইরাস চাঁদপুরকে গ্রাস করে পেলে। করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাস থেকে রক্ষায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান ৯ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চাঁদপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন। এ লকডাউন বাস্তবায়নে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান-এর নেতৃত্বে ‘উপহার যাবে বাড়ি’র পাশাপাশি লকডাউন বাস্তবায়নেও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করে।
করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা :
দিন দিন চাঁদপুরে করোনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সাথে করোনা পজেটিভ হয়ে এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও ডাবল অংকে রুপ নেয়। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান-এর পরামর্শে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে জনসচেতনতায় মাঠে নেমে পড়েন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। রাস্তা-ঘাট, মার্কেট-শপিংমল, দোকানপাট, পাড়া-মহল্লা এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করা হয়।
বিনামূল্যের হোটেলে খাবার ব্যবস্থা :
দরিদ্র, পথিক, মুসাফির, পথশিশু, উদ্ভাস্তু মানুষের কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান চাঁদপুর শহরের বেশ কয়েকটি হোটেলে বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করেন। এ সকল মানুষের জন্য রমজান মাসেও ইফতার এবং সেহরীর ব্যবস্থা ছিল।
ভর্তুকি দিয়ে ২০% কম দামে সকল প্রকার পণ্য ও ঔষধ বিক্রির ব্যবস্থা :
চাঁদপুর জেলা শহরের লিটন ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, পিক এন্ড পে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, পুরানবাজারের সেবা ফার্মেসীতে সর্বসাধারণের জন্য ২০% কম দামে সকল প্রকার পণ্য এবং ঔষধ বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এই ২০% জেলা প্রশাসন থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়।
কোভিড-১৯ রোগীর বাড়ি লকডাউন :
করোনা ভাইরাসের কারনে জনজীবনে হতাশা নেমে আসে। ঘরে বসে থাকতে থাকতে মানুষ অসহ্য হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। মানুষ কাজের সন্ধানে বের হয়ে পড়ে। মানুষ ঘোষিত লকডাউনকে আর লকডাউন মনে করে না। মানুষের স্বাভাবিক দিনযাপন শুরু হয়। সারা বাংলাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও একই অবস্থা। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসন স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে করোনা পজেটিভ অর্থাৎ কোভিড-১৯ রোগীর বাড়ি লকডাউন বাস্তবায়ন শুরু করে।
সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ :
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসাধারণের মাঝে স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেন্ড গ্লাবস, মাস্ক বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩ শ থেকে ৫ শ মাস্ক বিতরণ করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার প্রতিনিধিদের হাতে প্রায় প্রতিদিনই ২ শ থেকে ৫ শ মাস্ক তুলে দেওয়া হয়।
৫০% কম দামে সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি :
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান চাঁদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল ও বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ৫০% কম দামে সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা করেন। এ সেবা চলমান।
বিনামূল্যে অক্সিজেন ও জ্বর মাপার ব্যবস্থা :
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান চাঁদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল ও বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে বিনামূল্যো অক্সিজেন ও জ্বর মাপার ব্যবস্থা করেন। সর্বসাধারণের জন্য সেবাটি চলমান।
কোভিড-১৯ রোগীদের বাসায় ফল, খাবার ও ঔষধ পাঠানো :
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের পরামর্শে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দল্লাাহ আল মাহমুদ জামান নিজে এবং জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত রোগীর বাসায় এক ঝুড়ি করে মৌসুমী ফল, খাবার ও ঔষধ পৌঁছে দেন। পাশাপাশি রোগীদের নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি কোভিড-১৯ রোগী এই সেবা পাচ্ছে।
সুস্থদের ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া :
করোনা জয়ী সকলের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১০০% মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা :
জেলার সকল নাগরিকের জন্য ১০০% মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করণে প্রতিদিন জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। এ কাজে ওয়ার্ড ভিত্তিক গঠিত কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা নিজ নিজ ওয়ার্ডে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১০০% মাস্ক ব্যবহার বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে মোবাইল টিম মাঠে তৎপর রয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবক টিম ১০০% মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে প্রতিদিন জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
বিকাল ৪ টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখা :
চাঁদপুরে দিন দিন করোনা পজেটিভ রোগী বেড়ে যাওয়ায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির পরামর্শে করোনা সংক্রমণ রোধে ঔষধের দোকান ব্যতিত সকল দোকানপাট বিকাল ৪ টার মধ্যে (কাঁচা বাজার ৭ টা পর্যন্ত এবং জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাবার হোটেল খোলা থাকবে) বন্ধ রাখার বিষয়ে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রথমে চাঁদপুর পৌরসভার ১৫ টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কমিশনার, পুলিশ বিভাগ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, আনসার ও ভিডিপি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কমিউনিটি পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি করে কমিটির মাধ্যমে কাজ করা হলেও এটি পরবর্তীতে জেলা ব্যাপি ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এ কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের নেতৃত্বে ১৫০ স্বেচ্ছাসেবক ও জেলা প্রশাসনের মোবাইল টিম বিকাল ৪ টা হতে মাঠে তৎপর ছিল।
”No Mask, No Service’; ‘No Mask, No Sale’; ‘No Mask, No Entry” ফর্মূলা বাস্তবায়ন :
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠানে ঘড় ‘No Mask, No Service’; ‘No Mask, No Sale’; ‘No Mask, No Entry’ শ্লোগানে কার্যক্রম শুরু করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। এটি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
শোভাযাত্রা, মানববন্ধন ও র্যালি :
মানুষদের লাগাম টেনে ধরতে কঠোরতা বাদ দিয়ে শোভাযাত্রা ও মানববন্ধনের আয়োজন করে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়া মানুষদের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম-কানুন মেনে চলার জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ব্যতিক্রমধর্মী এমন কর্মসূচি পালন করেছে। রাস্তায় প্রকাশ্যে কিংবা বাজারে এবং যানবাহনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, জেলায় শতভাগ মানুষকে মুখে মাস্ক ব্যবহারের আওতায় আনা, সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ছাড়া যানবাহনে যাত্রী না উঠানো, মাস্ক ছাড়া দোকানে পণ্য বিক্রয় না করা, করোনা পজেটিভ রোগীদের প্রতি মানবিক আচরণ করা ইত্যাদিসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলেই করোনার ঝুঁকি থেকে খুব সহজেই রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এই ভাবনা থেকেই জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের পরামর্শে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেন। অংশগ্রহণকারীরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ১৫০ টি প্লেকার্ড ও ফেস্টুন ব্যবহার করে। ইতোমধ্যে এই কর্মসূচীটি ২ জুলাই জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সম্মুখে এবং ৫ জুলাই চাঁদপুর শহরের লেকের (অঙ্গীকারের সামনে) পাড়ে মানববন্ধন পরবর্তী র্যালি নিয়ে কালিবাড়ি মোড় (শপথ চত্তর) হয়ে হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে শেষ করা হয়। এ কর্মসূচীটির ধারাবাহিক অংশ হিসেবে আগামী ৯ জুলাই বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় সম্মুখে অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও কর্মহীন মানুষ, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়মিতভাবে পৌঁছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সকল কাজ জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জেলা প্রশাসনের ১৫০ স্বেচ্ছাসেবককে সাথে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইল টিম পুলিশ ও আনসার সমন্বয়ে মাঠে কাজ করছে। উল্লেখ যে, জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান-এর পরামর্শে জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবক টিমটি তৈরী করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। স্বেচ্ছাসেবকদের এই টিমটি জেলা প্রশাসনের সাথে ২৬ মার্চ মাস হতে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছে।
দেশে করোনা বিস্তারের শুরু থেকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন উদ্ভাবনীমূলক নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এসব কাজে সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বার, আনসার ও ভিডিপি, স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, জেলা মার্কেটিং অফিসার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিক্ষক, সাংবাদিক, কমিউনিটি পুলিশিং এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তা নিচ্ছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।
লেখক পরিচিতি :
সংগঠক ও সমাজকর্মী
এবং সমন্বয়কারী, জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবক টিম, চাঁদপুর।