প্রকৃতি কখনো প্রতিশোধ নিতে ভুল করে না একথাটা আমরা হয়তো মানতে পারি না কিন্তু অবাক হলেও আজ আমরা সে প্রমাণ পদে পদে পাচ্ছি। দূর্যোগ কখনো এমনি এমনি আসে না একের পর এক মানুষের প্রকৃতির উপর অত্যাচারে আজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে প্রকৃতি তাই নানা রকম ভাবে আমাদের সংকটের যায়গা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই সংকট বা স্তব্ধতা দিন দিন সাধারণ মানুষকে নিরব করে দিচ্ছে। যে নিরবতা আমাদের ভাবনা শক্তিকে একেবারে ধ্বংসের মুখে পতিত করছে। এই সমাজ ব্যবস্থা কিংবা সমাজের অনন্য দৃষ্টায়ন আমাদের প্রতিটি পদে সংঘাতের আভাস প্রদান করছে। যাই হোক এরই মধ্যে আমাদের চলার শক্তিগুলো তৈরি করতে হবে। নতুবা সৃষ্টিশীল কাজগুলো আমাদের কাছ থকে এক সময় হারিয়ে যাবে। আজ মানুষে মানুষে সংঘাত মানুষে মানুষে বিবাদ যেন লেগেই আছে ,আমরা কি পারি না! এ সমস্যা থেকে বের হতে? শুনতে খারাপ লাগলেও আমার একটি কথা বলতেই হয় আমরা পারবো না! কারন পারার মত সে কাজ আমরা করছি না। লোভ লালসা আর মিথ্যার স্তম্ভ গুলো আজ বেরেই চলছে। আমাদের চিরাচরায়িত সংস্কৃতিগুলোও আজ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই বিলুপ্তকে রোধ করতে হলে আমাদের চলতে হবে সত্যের পথে, সুন্দরের পথে। যে সমাজে থাকবে প্রগতি, শান্তি, শৃঙ্খলা, এবং সাম্য ও পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, পারস্পারিক আন্তরিকতা এবং কল্যানকর মানুষের সুন্দর চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পৃথিবীর মানুষ এই প্রথম একটি মহা দুর্যোগের মুখে পতিত হয়েছে। কোন দুর্যোগ যখন বড় আকার ধারণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে তখনই সে দুর্যোগকে অতিমারী বলা হয়। করোনা সংকট এখন অতিমারী পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দেশে বিদেশে মানুষের মৃত্যুর হার ও সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে। বিশ্ব জুড়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলছে এই দূর্যোগ। সম্প্রতি আমাদের দেশে করোনাজনিত কারনে ও চরম দারিদ্রের সীমা অতিক্রম করে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে। নিন্মবিত্ত সংসারে পারিবারিক সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সমাজবিদরা। প্রায় দেড় বছর ধরে সারা পৃথিবীকে ওলোট পালোট করে দিচ্ছে এই করোনার কারনে আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। অন-লাইন শিক্ষার নামে যা চলছে তা অনেক সময়ই হাস্যকর বলে মনে হয়। ষাট জনের ক্লাসে ১৪ জন ঢুকতেই ক্যামেরা অফ করে দেয়, এভাবে শিক্ষকরা কতটুকু শিক্ষা প্রদান করতে পারেন তা আমার বোধগম্য নয়। ১৩৪৬-১৩৫৩ সাল পর্যন্ত বয়ে যাওয়া ব্লাক ডেথ বা কালো মৃত্যু মহামারীতে প্রায় ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো তখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন এখনকার মত ছিলো না,তাই মৃত্যুও সংখ্যা হু হু কওে বেড়ে গেছে।করোনাও বিশ্বব্যপি যে তান্ডব সৃষ্টি করেছে তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে তা বলা মুশকিল। তবে এখন পর্যন্ত্য সে সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কম। এই সংখ্যা নিয়ে পুলকিত হবার কিছু নেই। কারন একেকটি ঢেউ আসছে আর মৃত্যুও মিছিল বেড়েই চলছে। এই নিত্য নতুন ঢেউ কত বছর ধরে চলবে তা এখনো আমাদের জনা নাই। আমরা অজানা গন্তব্যের পথে ছুটে চলছি,আমরা জানি না কখন আমাদের কি হবে। কিভাবে আমরা জীবন কাটিয়ে যাবো। করোনার করাল গ্রাস প্রায় প্রতিটি দেশেরই সামাজিক ভারসাম্য ,অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট্য করে দিচ্ছে । কোন কোন ক্ষেত্রে দেশে ঐতিহ্য বাহী সংস্কৃতিকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে। একের পর এক নানা ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি হচ্ছে। এ যেন মরার উপর খারার ঘা। নতুন করে আসলো ব্ল্র্যাক ফাঙ্গাস,ইয়োলো ফাঙ্গাস ও হোয়াইট ফাঙ্গাস, বোনডেথ নামক ফাঙ্গাস। এর পর আরো কত কি আছে কে জানে ? সবাই ভালো নেই। এই পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় যারা সমাজ পরিচালনা করছেন, হয়তো বিভিন্ন ইসুতে তারা ভালো আছেন। কিন্তু সাধারন মানুষ ভালো নেই। যারা দিন মুজরি তাদের কথা নাই বা বললাম, কতটা অসহায়ত্ব দিন যাপনে আছেন সেটা হয়তো মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বেশি।
যারা মানুষকে আনন্দ দিয়ে, বিনোদন দিয়ে নিজের সংসার চালাতো তাদের আজ কি অবস্থা? অনেকেই ভাবতে পারেন তারা ভালো আছে, সত্যি বলতে তারা ভালো থাকার অভিনয় করছে কোন কোন ক্ষেত্রে। আত্ম সন্মানকে হয়তো তারা বিসর্জন দিচ্ছেন না কিন্তু জীবনের কাছে পরাজয় স্বীকার করছেন। আজ আনন্দহীন হয়ে পড়েছে সকল কিছু। সাধারণ মানুষের মধ্যে হাহাকার কাজ করছে। কি হবে সামনে? কি করবে তারা? ঝড়ে পরছে যুব সমাজ নেই চাকরী, নেই কর্মসংস্থান, নেই রাষ্ট্র্য পরিচালনা কর্তাদের মাথা ব্যথা। এর শেষ কোথায়? কিহবে আগামী সময়ে? নানা প্রশ্নে আজ জর্জরিত আমাদের সমাজ, আমাদেরর ব্যক্তি জীবন। সাংস্কৃতিক অঙ্গণে করোনার ভয়াল ছোবল পুরো শিল্প সমাজকেই কুপকাত করে ফেলেছে। সংস্কৃতির যেই অঙ্গনেই আমরা তাকাই না কেন, চারদিকে শুধু হাহাকার আর হতাশা। যে সব শিল্পী মঞ্চ, টেলিভিশনে পরিবেশনার মাধ্যমে সংসার পরিচালনা করতো, তারা আজ মাসের পর মাস চরম বেকারত্বে ভুগছেন। নানা ডিগ্রি অর্জন করে যারা দিনের পর দিন সাধনা করে সংগীত শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়েছেন আজ তারা ভয়াবহ ভাবে দিন অতিক্রম করছেন। সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় যেসকল উপাত্ত্বগুলো ছিলো তা আজ একে একে ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। আশার আলোয় যখনই আলোকিত হচ্ছে বা কোন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে তখনই কোন না কোন ভাবে আমরা দুর্নীতিকে বা অব্যবস্থাপনা জনিত নানা ত্রুটিকে দেখি বাসÍবায়ন করতে। নানা গল্প আর নানা ইতিহাসের তখন রচনা হয়। সরকারকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে চলে নানা রকম কারসাজী। মূল শিল্পীদের পরাজয় হয়ে যায় আত্মসম্মানের কাছে। কারণ সারা জীবনের সম্মান।
কুলাঙ্গারের কাছে বিসর্জন হতে দিতে পারে না। সংগীত প্রতিষ্ঠান বা স্কুল গুলোর বিপর্যয়।লক ডাউন কার্যক্রমে নেই ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি, নেই শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক রা ক্লাস নিতে পারছেন না, টিউশন করতে পারছেন না। বিশেষ করে যন্ত্র শিল্পীদের অবস্থা আরও খারাপ। অনেকে তবলা হারমোনিয়াম, সেতার, বেহালা, দোতরা ছেড়ে ছোট খাটো ব্যবসা শুরু করেছেন। সেই সুযোগ তো সবার নেই। পরিবার চালাতে কেউ বা নানা কাজে ঢুকে গেছেন। এত গুণ এত বিশেষত্ব সবই যেন আজ হৃদয় বিদারক হয়ে দাঁড়াচ্ছে জীবন সংগ্রাম নামক যুদ্ধের কাছে। এরই মাঝে শিল্পীদের জন্য সরকারী প্রণোদনা কাদের হাতে পৌঁছেছে তা আমরা জানি না, তবে এতটুকু জানি সত্যিকার ভাবে যাদের জন্য এই প্রণোদনা পৌঁছানো জরুরি ছিলো তাদের হাতে সে টাকা পৌঁছায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক তেল মর্দন লোক যারা শিল্পী নামক শব্দের লেবাস লাগিয়ে সমাজে বুক ফুলিয়ে চলে আর নানা রকম ভাবে বা গায়ের জোর প্রদর্শন করে। মুখের চাপা মেরে নানা সময়ের সরকারি লোক বা প্রশাসনিক লোকের সুনাম গেয়ে নিজের আখের গোছানোর কাজে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এরা সব সময় সুযোগ খুজে কখন ঠিক সময়ে ঠিক যায়গা থেকে লুটপাট করবে। আর এই ক্ষেত্রে তারা নিজেদের কিছু লোককে প্রশিক্ষিত করে নেয়। যারা নানা উপায়ে এ কাজগুলোকে আদায় করে থাকে। আবার এই কাজ করতে সমাজের অনেক রাজনৈতিক, সামাজিক এমন কি সুশীল সমাজও মদদ দিয়ে থাকেন। যাই হোক সে বিষয়ে আর নাই বা গেলাম। এ বিষয়ে আরেকটি কথা, দুই, পাঁচ, দশ বা হাজার টাকা একটি পরিবারের জন্য কতদিন চলতে পারে! এটা সত্য, প্রণোদনার ক্ষেত্রেও দেখা গেলো সরকারি লোকেরাই প্রাধান্য পাচ্ছে। এখানে সাম্যতার আর কিই বা থাকে! সাম্পদ্রায়িতার বিষ দাঁতের ছোবল করোণার গ্রাস থেকেও অনেকটাই বেশি। আমি এমন ও অনেক শিল্পী পরিবারও জানি, যারা দিনের পর দিন একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছে কিংবা ধার দেনা করে সংসার চালাচ্ছে। অথচ স্বাভবিক সময়ে তাদের স্বচ্ছলতার কোন অভাব ছিলো না। তাই প্রশ্ন জাগে, সরকারি প্রণোদনা গেল কাদের হাতে! আমাদের সার্বিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চলছে অশনি সংকেত। শিল্পীদের দৈনন্দিন জীবন এখন আশঙ্কাগ্রস্ত। কর্মজীবি শিল্পীরাও এখন বেকারত্বে দিনাতিপাত করছে। নাট্যজগত, সংগীতজগত সিনেমা সব খাতের শিল্পীরইি হুমকির মুখে। এ ক্ষতি আমাদের চলমান ধারাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। করোনা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসলেও যা থেকে উঠতে অনেকটা সময় লাগবে। তাছাড়া এ সংকটগুলোর রেশ অনেক দিন বা অনেক কাল বহন করতে হবে আমাদের। হয়তো এক্ষেত্রে আমাদের চলার পথ বা মতের পথের ভিন্নতা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেই সংকেত কিছুটা হলেও আমরা আজ বুঝতে পারছি। বিকাশের চেয়ে আজ প্রকাশটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একটু শিক্ষার মধ্যে অনেক প্রকাশ যা ভুলে র্জজরিত। কিন্তু এই ভুলগুলো কিছুদিন পর বা কিছু কাল পর অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহা অনেক ক্ষতির সম্মুখিন করবে। সবচে বড় কথা, সংগীত ও নৃত্য অনলাইনে কোন ভাবে সঠিক শেখানো যায় না। গুরু শিষ্য পরম্পরার প্রথম শর্তই হচ্ছে গুরুর সান্নিধ্য বা গুরুর কাছে সরাসরি ও প্রত্যক্ষভাবে তালিম নেওয়া। আমাদের দেশে একে তো নেটওয়ার্ক দূর্বল। উপরন্তু কয় জনেরই ভালো মোবাইল বা ট্যাব বা কম্পিউটার রয়েছে যা দিয়ে তারা অনলাইন মিউজিক ক্লাসে অংশ গ্রহণ করতে পারবে! বাংলাদেশে বড় বড় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা করছে অনলাইনে শিক্ষা দেওয়ার। কিন্তু সেটা খুব একটা সফলতা পায়নি। এ দুর্দিনে শিল্পীদের মানসিক ভাবে সুস্থ্য ও চাঙ্গা রাখার জন্য সারা পৃথিবীতেই ভার্চুয়েল অনুষ্ঠান চলছে। কিন্তু এ অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহন করেও এক কানা কড়ি পাচ্ছেন না শিল্পীরা। যে কারনে অনেক শিল্পী এ ধরনের অনুষ্টান করা থেকে বিরত আছেন। যারা সুন্দও ব্যবস্থাপনায় অনুষ্টানের আয়োজন করছেন তাদের সাধুবাদ জানাই এবং প্রশংসা করি। তবে এই সুযোগে ফেসবুক ও ইউটিউব এর বদৌলতে বহু অ- শিল্পী, শিল্পী বনে যাচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব আমাদের সর্বস্তরের সংগীতাঙ্গনেই পড়তে বাধ্য।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিল্পীরাই হত দরিদ্র এ কথা অস্বিকার করতে বাঁধা নেই। শিল্পীদের এই হত দরিদ্র অবস্থায় সামর্থ্যবান শিল্পীরা যদি এগিয়ে না আসে সমাজের উচু মহল যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে আমাদের সংস্কৃতির বিরাট ক্ষতি হবে। আমি মনে করি বর্তমানে সরকার, সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়, এবং কর্পোরেট হাউস গুলোর এখন এগিয়ে আসার সময় এসেছে।এদেশের অপামর শিল্পী সমাজের দিকে তাকিয়ে তাদের সাহয্যের হাত প্রসারিত করতে হবে। যদি তারা এই গুরুত্ব বুঝতে না পারেন তাহলে শিল্পী সহ শিল্পীর তালিকা থেকে অসংখ্য নাম হারিয়ে যাবে। এবং সাহায্যেও বন্টন হতে হবে খুবই যাচাই বাছাই করে। সেটা অবশ্যই প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক হলে ভালো হবে। সরকারের সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মীর হাত দিয়ে অবশ্য এই দ্বায়ীত্ব বন্টন করতে হবে। যারা সত্যিকার অর্থে শিল্প সমাজকে ধরে রেখেছে যারা দিনের পর দিন সমাজের উন্নয়নের জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যাদের অবদান অনেক বেশি তাদেরকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে অবশ্যই অনুদানের পরিমান একটু বেশি দিয়ে হলেও তাদের মনোবলকে ধরে রাখতে হবে। কিন্তু সংস্কৃতি কর্মীদের কোন কথা শুনার মত লোক বাংলাদেশে নাই, যারা অবিভাবক রয়েছেন তাদের আবার উদার মনোভাব নেই। লক্ষ্য করা যায় কিছু বাটপার সিটার, নামধারী সংস্কৃতি সেবী হয়ে সত্যিকার অর্থে সঠিক শিল্পীকে তারা মূল্যায়ন না করে তাদের যারা তৈল মর্দন করে তাদের কথাই শুনেন বা তাদের জন্য কিছু কাজ করে বাকিটা নিজের আখের গোছাতে থাকেন। এমন সামাজিক অবনতিতে কতটা সংস্কৃতির প্রসার হবে তা হয়তো সবাই বুঝতেই পারছেন। এদেরকে উপেক্ষা করে ভালো পর্যায়ে ভালো কিছু করা সম্ভব বলে মনে হয় না। এদিকে উদার পন্থী কিছু মানুষ এদের ভয়ে বা নোংরামীতে না যাওয়ার জন্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা বাড়ান না। এভাবে দিনে দিনে পিছিয়ে যাচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি। এছাড়া ও আমাদেও দেশে ধর্মীয় অনুভুতি সাংস্কৃতিক চর্চা করার পিছিনে না না রকম বাঁধা নিষেধ তো রয়েছে আগে থেকেই ।
কোন দেশের সংস্কৃতির উন্ন্য়নের সাথে সেই দেশের উন্নয়ন ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। যে দেশের সংস্কৃতি যত উন্নত সে দেশ ততো বেশি উন্নত। আর সাংস্কৃতিক অঙ্গন যদি শিল্পী শূন্য হতে থাকে তাহলে কি বিপর্যয় হবে তা কি আমরা বুঝতে পারছি!আমাদের একটি কথা খেয়াল রাখা উচিত আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চাইতে অনেক ভিন্ন।এদেশে সবচেয়ে অসহায় হচ্ছে নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। বাইরে থেকে কে কি ভাবে জানি না, কিন্তু এই দুই ভাগের মধ্যেই বেশির ভাগ শিল্পী ও সহ-শিল্পীরা পড়েন। এদের সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই থাকে না যে কারনে জীবনের শেষ সময়ে এসে তারা চরম দারিদ্রের শিকার হন।আর বাধ্য হন অন্যের কাছে হাত পাততে।এবার আর শেষ বয়সে নয়,যার যার অবস্থান থেকে কোনঠাসা হয়ে গেছেন আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ গুলো। ছেলে মেয়েদের ভরন পোষন কতটুকু চালিয়ে নিতে পারবেন তা বলা বেশ মুশকিল। এদের অনেকেই স্কুল ,কলেজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে নিযুক্ত ছিলেন শিক্ষক হিসেবে।কিন্তু করোনার কারনে তাদের বেতন বা চাকরী কোনটাই নেই।অনেকে শুধুমাত্র টিউশন করেই তার সংসার চালাতেন। সে যায়গা থেকেও কেউ বিনা ক্লাসে টিউশন ফি প্রদান করছেন না। এ কঠিন পর্যায় থেকে কবে রেহাই পাবেন তা হয়তো জানা নেই আমাদের এই প্রিয় মানুষগুলোর। জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করে নিজের চর্চাকে ধরে রাখা অনেকটাই কষ্ট। আমার জানা মতে এমনও অনেক শিল্পী রয়েছেন যাদের অভাবে সংসার পর্যন্ত ভেঙ্গে গিয়েছে। দিশেহারা হয়ে কেউবা ধর্মত্যাগ কেউবা পরিবার ত্যাগ করেছেন। ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন আজ কঠিন থেকে কঠিন সময় পাড় করছে। আর এসময়ে যারা সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছেন তাদের প্রতি আমরা শিল্পী সমাজ কৃতজ্ঞ চিরকাল। এরাই সত্যিকারের সংস্কৃতি সেবী। এরাই সমাজের পরম বন্ধু। যারা সামর্থ থাকা সত্যেও এ লড়াইকে ভয় পেয়ে সরে গেছেন তারা কখনোই সংস্কৃতি সেবী নন। তারা ছিলো সুবিধা ভোগী আজ সময়ের সাথে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। সমাজে এদের মত কুলাঙ্গারদের বাস্তবধর্মী চিন্তাচেতনার নগ্ন রূপ গুলো প্রকাশ পেয়েছে।
আমাদেরর প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ, নবান্ন সহ,নৃত্য দিবস, সংগীত দিবস, কবিদের জন্মজয়ন্তী, নাট্য দিবস ও নানা জনের প্রয়াণ দিবস। কোথা থেকে এ দিবস গুলো চলে গেলো টের ও পেলাম না।যেখানে হাজার হাজার দর্শক নিয়ে বর্ণ্যাঢ্য এই অনুষ্ঠান গুলো করা হতো সেখানে আজ দেড় বছর কোন অনুষ্ঠান নেই। কিছু বিশেষ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সল্প পরিসরের কিছু অনুষ্ঠান করেছে। কিন্তু এভাবে প্রতিষ্ঠান নানা রকম প্রাতিষ্ঠানিক কর্যক্রম করা থেকে ব্যহত হচ্ছে। এতে শুধু যে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, বিশেষ ভাবে যারা টেকনিক্যাল সাইডে (স্টুডিও, ভিডিও, সাউন্ড, লাইটিং, পরিবহন, ক্যামেরাম্যান) কাজ করে তাদের এখন দিন চলতে অনেক কষ্ট। লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ এখন গোডাউনে পরে আছে,অথচ স্বাভাবিক সময়ে এই কাজ কারে অনেকে সংসার চালাতেন। এখন দোকান ভাড়া, কর্মচারি বেতন, এবং গোডাউন ভাড়া দিয়ে খুব বিপর্যয়ে আছেন। আজ তাদের পাশে দাড়াবার মত কেউ নেই। অনেকে লোন করে বাকিতে অনেক জিনিস ক্রয় করেছেন এখন দুটানায় পড়ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। এদিকে যত্নের অভাবে কোটি টাকার সম্পদ ও অচল হয়ে যাচ্ছে।
আমরা প্রত্যাশা করি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এই বিপর্যয়ে বা দূর্যোগময় সময়ে সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা যথাযথ হবে এবং অচিরেই অচিরেই করোনা জয় কওে আবার মুখরিত হবে আমাদের শিল্পাঙ্গন। নাট্য পাড়া এবং সংগীত মঞ্চ গুলো আবার ও মুখরিত হবে। শিল্পকলা, একাডেমী, বাংলা একাডেমী, মহিলা সমিতি, জাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরী আবার জমজমাট হবে শিল্পী, কলা-কৌশলী ও শ্রোতা-দর্শকদের আড্ডায়। করোনার করাল গ্রাসে আমাদের কাছ থেকে অনেক সাহিত্যিক, শিল্পী, সংগঠক, সংস্কৃতি ও চলচিত্র ব্যক্তি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইলো সমবেদনা।
আমরা চাই না কোন শিল্পী টাকার অভাবে বা ক্ষুদার যন্ত্রণায় মারা যাক, আমরা চাই শিল্পীরা সন্মান আর ভালোবাসা নিয়ে জীবন টা অতিবাহিত করুক।জাতির কল্যানে শিল্পীদের সঠিক সন্মান দেওয়া উচিত। কারন শিল্পীর শিল্পত্ত্বটুকু বাগানে ফোটা ফুলের মত।যে ফুল নিজের জন্য ফুটে না তার সৌন্দর্য এবং গন্ধ সব সময় অন্যের তরে তেমনি শিল্পী কোন জাতিতে নয়, কোন সম্প্রদায়ে নয় সে সবার জন্য। সবার মঙ্গল হোক ,সুন্দর আগামীতে পথ চলার প্রত্যয়ে আজ এতটুকুই, সবাই ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং সষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন।
আজ,
বুধবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৯ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।