রহমান রুবেল:
এ যেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা। জীবনের দীর্ঘ সময় পাড়ি দেয়া এ বীর মুক্তিযোদ্ধারা একে অপরকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করেন যুদ্ধজীবনের গল্প। এমন দৃশ্য দেখা গেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। নানারকম কার্যক্রম ও আনন্দঘন মুহূর্তে দিনটি কাটান বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। অনুষ্ঠানটি সকাল ১০ টায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে শুরু হয়। পরে সাড়ে দশটায় প্রথমে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত পরে গীতা ও বাইবেল পাঠের মাধ্যমে আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওসমান গনি পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় ও জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ। এবং অনুষ্ঠান উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। এরপর সকাল ১১ টায় শুরু হয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। এ সময় অনেকেই মুক্তিযুদ্ধা যুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন।
এসময় স্মৃতিচারণ করেন শহীদ সালাউদ্দিন বীর উত্তম এর স্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএলএফ কমান্ডার হানিফ পাটোয়ারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকমত উল্লাহ স্বপ্ন, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, বীরপ্রতীক শাহজাহান কবির, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মিয়া মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুস, ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম প্রমুখ। এসময় তারা বলেন, আগামী দশ বছর পর হয়তো একজন মুক্তিযোদ্ধাও বেঁচে থাকবেন না। দিনদিন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমছে। বয়স হচ্ছে চিরবিদায় নিতে হচ্ছে। আমাদেরও একসময় বিদায় নিতে হবে। চাঁদপুর জেলা পরিষদ আমাদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়ায় বিশেষ ধন্যবাদ দিতেই হয়।
অনুষ্ঠানে দুইজন সেক্টর কমান্ডার, তিনজন বীর উত্তম, দুই জন বীর বিক্রম, চারজন বীর প্রতিক ও দুইজন স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তসহ মোট ১শ ৬৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অবদান রাখার কারণে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তোরিয় পড়িয়ে দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের এমন উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধারা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান আমাদেরকে একটি পতাকা ও একটি ঠিকানা দিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এ দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক উন্নত জীবন যাপন করবে এবং এ দেশটি হবে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র ।
তিনি আরো বলেন, যে দেশের প্রতিটি বালুকণায় শহীদদের রক্ত মিশে আছে, আজকে সে দেশের মাটিকে অপবিত্র করার জন্য খালেদা জিয়া অতীতের মতো আজকে ও তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগ সরকার মাটি ও মানুষের সরকার। জনগণের স্বার্থে তাদের এমন অপচেষ্টা কখনোই এ সরকার বাস্তবায়িত হতে দেবেন না।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, আপনারা জানেন একাত্তরের পরাজিত শক্তি তাদের দোসর উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী সম্প্রতি দেশকে অস্থিতিশীল করতে ভাস্কর্য আর মূর্তিকে একত্রিত করে কথা বলছে। আমি বলব মূর্তি হলো সেই জিনিস যেখানে পূজা করা হয় আর ভাস্কর্য হলো শিল্প। একটি দেশের সংস্কৃতিকে এই শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। সব দেশেই বিশেষ করে সৌদি আরব ইরান ইরান-পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য দেখা যায়। কিন্তু এদেশের মৌলবাদীরা দুইটি বিষয়কে একত্রিত করে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ভাংচুরের মত হেন কাজ করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. জহিরুল ইসলাম।