রিয়াজ শাওন
করোনার ভয়াল থাবায় টালমাটাল বিশ্ব। থমকে গেছে জনজীবন। সুতায় দুলছে অর্থনীতি। অচল শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের জীবন ভাসছে হতাশার সাগরে। প্রানঘাতী করোনা কেড়ে নিয়েছে জীবনের মহামূল্যবান একটি বছর। কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ প্রান। দিয়েছে দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা আর হতাশা। আর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত পড়েছে অনিশ্চিতয়ার মূখে।
তেমনই একজন শিক্ষার্থী চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এমরান হোসেনের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরেছেন দৈনিক শপথের নিজস্ব প্রতিবেদক রিয়াজ শাওন।
দৈনিক শপথ: মহামারি করোনার এই দূর্যোগকালীন বন্ধে পড়াশোনা কেমন চলছে?
এমরান হোসেন: কোভিট-১৯ সারা পৃথিবীতে এক আতঙ্কের নাম। এই করোনা পুরো পৃথিবীকে স্থবির করে দিয়েছে। অনেকাংশে ক্ষতি করেছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৬০ টি দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ও শিক্ষা ব্যবস্থার ঊর্ধতন কর্মকর্তারা নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করায় আমরা শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও উপকৃত হচ্ছি। বিকল্প পদ্ধতিতেই পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছি।
দৈনিক শপথ: দীর্ঘ সময় ধরে কলেজ বন্ধ। এই বন্ধ সময়ে বাসায় পড়াশোনা কিভাবে করা হয়?
এমরান হোসেন: বর্তমান সময় আধুনিক সময়। প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব হওয়ায় কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ হওয়ার ফলেও আমরা অনলাইনে জুম এপস্-এর মাধ্যমে স্যারদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করি। তবে শতভাগ এ অংশগ্রহণ আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। এর বহুবিধ কারণ রয়েছে। যেমন:
১. এ পদ্ধতিতে আমরা একেবারে নতুন। ২.সব এলাকায় ইন্টারনেটের হাই স্পিড নেই। ৩.দারিদ্র্যতার কারণে অনেক ছাত্র-ছাত্রী অনেক টাকার এমবি কিনতে পারে না। ফলে সেসব ক্লাসে অংশগ্রহণ বা সবগুলো লাইভ ক্লাসের ভিডিও গুলো দেখতে পারে না। ৪.অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্মাট ফোন ব্যবহার করে না। ৫; অনেক বাসায় স্মাট ফোন, টিভি রেডিও কোন কিছুই নেই।
দৈনিক শপথ: বাসায় পড়াশোনা করার জন্য কলেজ থেকে কোন গাইডলাইন দেওয়া হয় কি না?
এমরান হোসেন: হ্যাঁ, বাসায় নিয়মিত পড়াশোনার জন্য কলেজ থেকে আমাদের সাথে অধ্যক্ষ মহোদয় স্যার, বিভাগীয় প্রধানসহ আমাদের বিভাগের সকল সম্মানিত শিক্ষকগন আমাদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর সচেতনতা এবং এসময় কোন কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমরা পড়াশোনা করলে আমাদের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখতে পারবো সে বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা দিয়ে যাচ্ছেন। যেমন: আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো চিহ্নিত করে দিচ্ছেন এবং পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও বাস্তবতার নিরিখে চাকরির বাজারে লড়াই করতে বা বেঁচে থাকতে নানা কৌশল অবলম্বন করতে বলেছেন।
দৈনিক শপথ: বাসায় পড়াশোনা ছাড়া অন্য কি করে সময় কাটে?
এমরান হোসেন: আসলে শিক্ষা জীবনের এক যুগ পার করেছি। এতো লম্বা সময় কখনো বাড়িতে কাটাই না। আর তাই এ সময়টাতে পড়াশোনার পাশাপাশি পারিবারিক কাজে সময় দিচ্ছি। বাড়ির সামনে ভিটেমাটিতে কিছু ফলফলাদি ও সবজি চাষ করেছি। আবার মাঝেমধ্যে ঘরের কিছু কাজ করি। যা আসলে আগে করা হতো না। আর পরিবারের সবার সাথে কখনো খেলাধূলা কখনো বা মধুর ঝগড়া। দীর্ঘসময় বাসায় থাকলে যা হয় আরকি।
দৈনিক শপথ: সাধারণত এত দীর্ঘ সময় ধরে কলেজ বন্ধের সাথে তোমরা পরিচিত না। সেই ক্ষেত্রে এতদিন কলেজের ক্লাস থেকে দূরে থাকায়। পড়াশোনা প্রতি কোন অনিহা কাজ করছে কি না?
এমরান হোসেন: ১৮ই মার্চ ২০২০ সালে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। যার ফলে লম্বা একটা সময় কলেজ বন্ধ। ঠিক কবে নাগাদ কলেজ খুলে এটা এখনো সন্ধিহান। আসলে একটি জিনিসের সাথে যখন দীর্ঘদিন সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়ে যায় তখন কিছুটা অনীহাতো আসতেই পারে। তবে আমরা যারা শিক্ষাপিপাসু তারা অপেক্ষায় আছি কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। প্রিয় শিক্ষাঙ্গন, প্রিয় শিক্ষক, ও শিক্ষার্থী বন্ধুদেরকে আবার আগের মতো দেখবো।
দৈনিক শপথ: করোনার পর্রবতীকালে পড়াশোনায় কেমন প্রভাব পেলবে বলে তুমি মনে করো?
এমরান হোসেন: আমরা দীর্ঘদিন শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে বিমুখ ছিলাম। যার ফলে স্বাভাবিক পক্রিয়ায় ফিরতে কিছুটা সমস্যা হবে। আমাদের নিয়মিত যে পরীক্ষা পদ্ধতিটি ছিল দীর্ঘ সময় ক্ষেপন হওয়ায় সে সমস্যাটি ও আমাদেরকে চরম ভোগান্তিতে ফেলবে। তবে আমরা আশা রাখি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে এ সমস্যা কাটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। আর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এ পদ্ধতিটিকে পরিমার্জিত করে যদি উন্নত রাষ্ট্রের মতো আমরাও এভাবে পড়াশোনা করি তবে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদী।
দৈনিক শপথ: কলেজ, শিক্ষক কিংবা বন্ধু-বান্ধবী কাকে বেশি মিস করো?
এমরান হোসেন: আসলে কাকে বেশি মিস করি সেটা নির্ণয় করাটা কষ্টসাধ্য। প্রিয় শিক্ষাঙ্গন, প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধুদের সবাইকে অনেক বেশি মিস করি। এক সময় যাদের ছাড়া একটা মুহুর্ত কাটতো না। অপেক্ষায় আছি কবে প্রিয় ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সেলফি তুলবো। স্যারদের সাথে ক্লাস করবো, স্যারদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার গল্প শুনবো। বন্ধুদের সাথে কখন আড্ডা দিবো। দুষ্টমী করবো। কখন যে আগের মতো খুনসুটি ঝগড়া করবো।
দৈনিক শপথ: আচ্ছা এত লম্বা সময় ধরে কলেজ বন্ধ থাকায় তুমি কতটা খুশি?
এমরান হোসেন: আসলে প্রথমদিকে বন্ধের কিছুটা দিন ভালো লাগা আর খারাপ লাগার মাঝেই ছিলাম। কিন্তু মাস খানেক পর থেকে আর ভালো লাগেনি। বরং কলেজ বন্ধ থাকার পরেও কলেজ প্রাঙ্গনে কয়েকবার গিয়েছি। প্রিয় স্যারদের চাঁদমুখখানি দেখতে ব্যাকুল ছিলাম আর বন্ধুদের ফোন করেও নিয়ে আসতাম একটু সময় দেওয়ার জন্য।
দৈনিক শপথ: করোনা পর্রবতীকালে তোমার ভাবনা কি?
এমরান হোসেন: সবকিছুকে আগের মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আনতে দেশ সমাজ জনগন এক হয়ে কাজ করতে হবে। বিভেদ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাগুলো ভুলে সবাইকে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সব বিভাগে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মাধ্যমে সারাদেশে সবাই একযোগে কাজ করতে চাই।
দৈনিক শপথ: একজন শিক্ষার্থী কিভাবে করোনাকালে মানসিক এবং শারীরিক সুস্থ থাকতে পারে বলে তুমি মনে করো?
এমরান হোসেনঃ সংগ্রামের মাধ্যমে টিকে থাকার শক্তি অর্জন করাই প্রাণসত্তার কাজ। প্রতিটা প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করে। মানুষ তার মধ্যে সর্ব উৎকৃষ্ট জাত। আর তাই প্রতিটা চ্যালেঞ্জকেই আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হবে। আর মনোবল না হারিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি দূঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। নজর রাখতে হবে অনলাইনে কখন কোন আপডেট আসে। আর শারীরিক সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই সচেতনতা জরুরি। সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধুলা চালিয়ে যেতে হবে।
দৈনিক শপথ: একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে অন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কি কি পরামর্শ দিতে চাও?
এমরান হোসেন: অধ্যবসায়ের ধারাবাহিকতা ধরে না রাখলে পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিগত সময়ের চেষ্টা বৃথা যাবে তাহলে। নিয়ম মাফিক রুটিন করতে হবে। যাতে প্রতিদিনই সবকটি বিষয়ের পড়াশোনা হয়। রুটিন ছাড়া পড়াশোনা ঠিকঠাক হয় না। সুতরাং সময়কে কাজে লাগাতে হবে। আজকের এ সময়টি জীবনে কখনো ফিরে আসবে না। সুতরাং সময় থাকতে রুটিন করে পড়াশোনাসহ যাবতীয় কাজ করলে পড়াশোনা ঠিক রাখতে পারবে।
দৈনিক শপথ তোমার সফলতা কামনা করে।
এমরান হোসেন: দৈনিক শপথকে অনেক ধন্যবাদ।