ডাঃ মিজানুর রহমান খান
ডাক্তার এ কিউ রুহুল আমিন ভাই আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। বিষয়টি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি নেই ভাবতেই মনে ভেতর ভিষণ খারাপ লাগছে। মৃত্যু মানে পরম সত্যকে মেনে নেয়া, মেনে নিতে বাধ্য হই। আমার সাথে ওনার সর্ম্পক খুব দেরি করে হয়েছে। গত একবছর খুব বেশি মেশার সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে গত বছর যখন সৌদি আরব হজ করতে যাই, কাকতালিয়ভাবে আমরা পাশাপাশি রুমে ছিলাম। যদিও ওনি ওনার মতো ছিলেন। আমি আমার মতো। তিনি ভাবিসহ ছিলেন।
আমার প্রতি ওনার টেককেয়ার দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছি। ওনি একজন সিনিয়র হিসেবে আমাকে খুব কেয়ার করেছেন। অল্প সময়ে কতো ¯েœহ আর ভালোবাসা দিয়েছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রতিটি মুর্হূতে ওনার কথা মনে পড়ছে। মনের ক্যানভাসে রুহুল আমিন ভাইয়ের মুখ বার বার ভেসে উঠছে।
হজে যতদিন ছিলাম তিনি চারটা কলা কিনলে আমাকে দুইটা দিয়েছেন। ফল আনলে আমাকে ডাক দিয়ে কিছু দিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বাস করুন, তিনি খুব কেয়ার করেছেন। সুযোগ পেলেই চা খেতে নিয়ে যেতেন। নামাজ পড়ার সময় হলে সাথে নিয়ে যেতেন। ওনার আন্তরিকতার কাছে নিজেকে খুব অনাথ মনে হয়েছে। মনে হয়েছে আমার জীবনে কেউ না থাকলেও তিনি থাকলে কোনো অভাব বোধ হবে না।
হজের যেসব ফরমালিটি আছে। সবকিছুতেই তিনি আমায় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। গাড়ি দিয়ে হজের কাজে বিভিন্ন স্থানে যখন যেতে হতো আমার জন্যে তিনি পাশের সিট রেখে দিতেন।
আমি রুম থেকে গুছিয়ে আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে যেতো। তিনি সবসময় পাশের সিট আমার জন্যে রেখে দিতেন। অল্প সময়ের মেশায় ওনাকে খুব ভালো মানুষ মনে হয়েছে। সত্যিই তিনি খুব ভালো মনের মানুষ। তিনিতো খুব সিনসিয়ার। আমি জুনিয়র বলে অনেক কেয়ারিং করেছে। গত একবছরে ওনাকে আমি অন্যরকম ভাবে ডিসকাভার করেছি।
সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীর একটা প্রোগ্রামে আমিও ছিলাম ওনিও ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘মিজান তুমি এখনো আমার বাসায় যাও নাই। এ নিয়ে আমার মনে আজীবন দুঃখবোধ থাকবে। তুমি এবার ঢাকায় গেলেই আমার বাসায় আসবে।’ এটাই ছিলো ওনার সাথে আমার শেষ কথা।
আমার স্ত্রীও রুহুল আমিন ভাইকে খুব ফিল করছিলো। অবশ্য বছর খানেক আগেও ওনি সিনিয়র পার্সন হিসেবে পরিচিত ছিলো। তিনি যেহেতু অনেক সিনিয়র তাই খুব বেশি মেশা হয়নি। মেশা আসলে হজে গিয়েই হয়েছে বেশি।
আমি তাকে আইডল মনে করি। তিনি ক্লিন-কাট মানুষ ছিলেন। কারো সাথে বাকবিতন্ডা ছিলো না কখনো। কারণ তিনি কারো অপকার করেছেন এমন কখনোই শুনিনি। ওনিতো উপকারই করতেন শুধু। ওনি সিনিয়রদের সাথে মিশতেন বেশি আমাদের সাথে কম মিশতেন। আমাকে সবসময় খুব ¯েœহের চোখে দেখতেন। সবসময় ছায়া দিয়ে রাখতেন। খুব বিশুদ্ধ মনের মানুষ ছিলেন তিনি।
ওনার সান্নিধ্যটা খুব বেশি মিস করছি। লাস্ট একবছরে আমরা এতো মিশেছি, খুব গভীর ও নিবিড়ভাবে মিশেছি। তাইতো খুব মিস করছি ভাইকে।
ওনার পারিবারিক বিষয় মেয়ে, ছেলে, সংসার সব খুঁটিনাটি বিষয়েই কথা হতো। লাস্ট ওয়ান ইয়ারে এতো মিশে গেছি যে তা খুব মিস করছি। মনের ভেতর খুব খারাপ লাগছে। ওনার সাথে আগে খুব সম্পর্ক হয়ে উঠেনি বলে গার্ডিয়ানশীপ মিস করছি। এখন এটাই খুব বেশি পোঁড়ায়। অনেক আগে যদি তার সান্নিধ্য পেতাম তবে মনে খুব স্বস্তি পেতাম। ভাই ভালো থাকুক ওপাড়ে। বেহেস্ত নসিব হয়ে যেন এ দোয়াই করি সবসময়।