ইকবাল বাহার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত চাঁদপুরের ৮টি উপজেলার ৩শ ৮৪জন প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন। এ পরিসংখ্যান গত এক বছরের। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুবরণ করেন এসব বাংলাদেশি প্রবাসীরা। যার অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। আত্মহত্যা ও খুনের মত ঘটনাও রয়েছে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, প্রতারক দালালদের প্রতারণার শিকার, লিভ-টুগেদার ও টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া এসকল মৃত্যর মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চাঁদপুর কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তথ্য সুত্রে জানা যায়, ২০২০ জুন মাসে প্রবাসী মৃত্যু নেই, জুলাই ২৩ জন, আগস্ট ৪২ জন, সেপ্টেম্বর ৬৬ জন, অক্টোবর ৮০জন, নভেম্বর ৫৪ জন, ডিসেম্বর ৫৫ জন, জানুয়ারি ৩৬ জন, ফেব্রুয়ারী ২৭জন, মার্চ-নেই, এপ্রিল- ৬ জন, মে ৪ জনসহ সর্বমোট ৩শ ৮৪ জন প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেন। গত ১ বছরে সারা বাংলাদেশে ১২৭২ জন মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনসহ আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। শতকার হিসেবে ৩৫ভাগের উপরে চাঁদপুরের প্রবাসীরা মারা গেছেন। যেখানে সারা বাংলাদেশে এপ্রিল/২০২১ মাসে মৃত প্রবাসী কর্মীর ১১৭ টি পরিবারকে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
সূত্র মতে, বিভিন্ন দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ও আকস্মিক মৃত্যুর বেড়ে গেছে। নিজ দেশের ভূখন্ড ছেড়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে পরবাসে ঠাঁই নেন প্রবাসীরা। দেশের মায়া ত্যাগ করে হাজার মাইল দূরে শ্রম বিক্রি করা এই প্রবাসীরা স্বপ্ন পূরণের আশায় কাজ করেন বছরের পর বছর। সবারই লক্ষ্য থাকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হয়ে ফিরে আসবেন দেশে। অথচ শ্রম বিক্রিতে ব্যস্ত প্রবাসীদের কর্মক্ষমতার পাশাপাশি কমতে থাকে আয়ুষ্কাল।
এখানে কিছু কিছু অপমৃত্য বেদনাদায়ক বলে মনে করেন অনেকে। অন্য দিকে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা খরচ অনেক ব্যয় বহুল হওয়ার অল্প আয়ের প্রবাসীরা যেমন ডাক্তারমুখী হতে পারেন না, আবার অনেক প্রবাসী বুকে ব্যথা অনুভব করলে স্বাভাবিক মনে করে চিকিৎসা নেয় না। অনেকের নেই ডায়াবেটিক এর মত রোগের কোন নিয়ন্ত্রণ। ফলে সহজেই এরা আক্রান্ত হয়ে পরেন হৃদরোগে হয়ে মারা যায়।
প্রবাসে মৃত্যু হয়েছে এমন পরিবারের স্বজনরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, ক.ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌর সভার মেয়র/সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলরের নিকট হতে দাপ্তরিক প্যাডে মৃতের পরিবারের সদস্য সনদপত্র (নমুনা মোতাবেক) সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার/সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক প্রতি স্বাক্ষরিত হতে হবে।
খ) ৪০০/-(চারশত) টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দায়মুক্তি সনদ, অঙ্গীকারনামা ও ক্ষমতা অর্পণ পত্র (নমুনা মোতাবেক)। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌর সভার মেয়র/সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার/সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে ।
গ) মৃতের পাসপোর্টের ফটোকপি / বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যায়ন পত্র / মৃত্যু সনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) এর সত্যায়িত ফটোকপি(যদি থাকে)।
ঘ) অর্থ গ্রহণকারীর ব্যাংক হিসাব নম্বরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রত্যয়ন পত্র/ ব্যাংক স্টেটমেন্টের মূল কপি। নাবালক সন্তান থাকলে নাবালক সন্তানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাব নম্বর ও প্রত্যয়ন পত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ) ।
ঙ) পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর কর্তৃক সত্যায়িত ১ (এক) কপি ও সহকারী পরিচালক, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কর্তৃক সত্যায়িত ১(এক) কপি সত্যায়িত রঙ্গিন ছবি।
এই ব্যাপারে দৈনিক শপথকে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, মৃত প্রবাসীর স্বজনরা আমাদের অফিসে আবেদন করলে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে হেড অফিস পাঠানো হয়। এরপর সবকিছু ঠিক থাকলে মৃত প্রবাসীর লাশ দাফনসহ সব প্রক্রিয়াই আমাদের তত্ত্বাবধানে হয়। লাশের স্বজনদেরকে সরকারি ৩ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।