ছবি সংগৃহীত
দৈনিক শপথ রিপোর্ট:
আলী আকবর বয়স ছাপ্পান্ন। চিমছাম শরীরের কালো মুখমন্ডলে আধপাকা দাঁড়ি। হাসি ল্যাপ্টে আছে মুখে। চেহারায় কোনো হতাশা নেই, দুঃখ নেই কিংবা কোনো আফসোস। অথচ এ লোকটিই প্রতিনিয়ত বয়ে বেড়াচ্ছেন পাঁচ লাখ টাকার ঋণের বোঝা। জেলে জীবনের ঋণ গত ত্রিশ বছরেও শোধ করতে পারেনি আলী আকবর। তের কি চোদ্দ বছর বয়সে বাবার সাথে নদীতে প্রথম মাছ ধরতে যাওয়া। তারপর ধীরে ধীরে মেঘনা নদীর সাথে গড়ে উঠে চমৎকার সখ্য। প্রথমে অন্যের নৌকায় কামলা খাটা। তারপর মনের ভেতর মহাজন হওয়ার সাধ জাগে। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ঋণ ধারকর্য করে নৌকা তৈরি করা হয়। কথায় কথায় বলছিলেন জেলে-মহাজন আলী আকবর।
নৌকা চালানোর ইঞ্জিন, মাছ ধরার জাল কিনতে না পারায় নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। সর্বশেষ একজন দাদনদার তথা আড়ৎদারের কাছ থেকে টাকা দাদন নিয়ে ইঞ্জিন আর জাল কিনে শুরু হয় মহাজনি জীবন। যদিও তিনি মহাজন হয়ে বসে থাকেননি। নৌকার সাথে নিজেই ছিলেন, মাছ ধরেছেন, জাল মেরামত করেছেন। নদী জীবনের প্রায় চার দশক পর সম্প্রতি কথা হয় চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর গ্রামের আলী আকবরের সাথে কথা হয়।
আলী আকবরের পাঁচ জনের সংসার। তিনি বলেন, ‘নদী জীবনের প্রথম দিন থেকেই আমরা ঋণী। অর্জন শুধু ছেলে মেয়েদের মানুষ করা। মেয়েদের ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিতে পারলেই হলো। জীবনে যা ঋণ আছে নৌকা জাল বিক্রি করলেও আরো দুই লাখ টাকা ঋণ থেকে যাবে। অর্থাৎ আমরা কখনো ঋণ মুক্ত হতে পারবো না। আজো কেউ পারেও নি। অনেকে জেলে পেশা ছাড়লেও জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। অথবা অন্য কাজ করে কেউ কেউ ঋণ পরিশোধ করেছে।’
শুধু আলী আকবর নন বহরিয়ার খলিল লক্ষ্মীপুরের ওয়ালী উল্ল্যাহসহ এভাবেই ঋণ চক্রে তাদের জীবন কাটছে। নিজের সংসার চালাতে গিয়ে কাজ করতে হয়। প্রতিদিন ছেলেদের কাছে সংসার খরচ ও হাত খরচের টাকা চাইতে ভালো লাগে না। তাই নদীতে মাছ ধরেন। স্বামী-স্ত্রীর সংসার চালাতে গিয়ে মাঝে মাঝে হিমশিম খেতে হয়।
চাঁদপুরের প্রায় প্রতিটি জেলে জীবনের গল্পই এমন। অবশ্য আড়ৎদাররা একটু ব্যতিক্রম। আড়তে একটা গদি নিয়ে বসেন। যদিও এর আগে নৌকা মালিক বা মহাজনদের অন্তত ৫-১০ লাখ টাকা দাদন দিতে হয়। না হয় গদিতে জেলেরা মাছ দেবে না। নৌকা মালিক আড়ৎদারের সাথে একটা মৌখিক চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী নৌকা মালিককে টাকা দাদন মানে ধার দেন। কারণ এ টাকার কোনো ঋণ নেই। শুধু শর্ত হচ্ছে প্রতিদিনের মাছ নির্দিষ্ট আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করতে হবে। দাদনদার বিনিময়ে শতকরা ১০ টাকা নিবেন আড়ৎদারি। যদিও দাদনদাররাও ঋণগ্রস্ত আছেন কেউ কেউ
হরিণা এলাকার আড়তদার বাচ্চু ছৈয়াল ও বিলাল হোসেন জানান, এ বছর চাঁদপুরের সীমানায় মাছের আমদানী কম। যে কারণে ঋণের টাকা পরিশোধতো দূরের কথা আরো ঋণের বোঝা বাড়ছে। বিগত বছর গুলোতে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রম প্রায় শত ভাগ সফল হওয়ার পরও চাঁদপুরের নদীতে মাছ একেবারে কম। তার উপর মার্চেই শুরু হচ্ছে জাটকা রক্ষা কার্যক্রম। আমরা সব সময়ই সরকারি এসব কর্মসূচি মেনে আসছি ভবিষ্যতেও মানবো।
চাঁদপুর মৎস্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান, জাটকা রক্ষা কর্মসূচি সফল করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।