মোঃ সবুজ হোসাইন:
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে নার্স এবং অপর নার্সের মেয়েকে যৌন হয়ারানি এবং নার্স কর্মচারীদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গত (৩ আগস্ট) বুধবার সিনিয়র নার্স ও সহকারী আরেক নার্সের মেয়ে চাঁদপুর সিভিল সার্জন বরাবর যৌন হয়রানি ও নার্সদের টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র নার্স গীতা রানীর মেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী পূজা (১৭) এর সাথে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেনের পরিচয় হয়। তারপর থেকে ফোন নাম্বার চাইলে এতে পূজা নাম্বার দিতে নারাজ হলে এক পর্যায়ে তিনি জোরপূর্বক পূজার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন। মোবাইল নাম্বার নেয়ার পর থেকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিয়ে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কথা বার্তা বলেন। তিনি বহুবার ভিডিও কল দিয়ে নগ্ম অবস্থায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন এবং একপর্যায়ে পূজাকে নগ্ম হতে বলেন। পূজা তার কথা অনুযায়ী অশ্লীল কাজ করতে না চাইলে তিনি তার বাসায় যেতে বলেন। পঃপঃ কর্মকর্তার স্ত্রী বাসায় না থাকায় তিনি পূজাকে বাসায় যেতে জোর করেন। তাঁর কোনো কথায় রাজি না হওয়ায় পূজাকে হুমকি দেয় বলে জানা গেছে। সে যদি এ সকল কথা কারো কাছে বলে এবং তার ডাকে সাড়া না দেয়, বাসায় না যায় তাহলে তার মা সিনিয়র নার্স গীতা রানীকে অন্যত্র বদলি করে দেয়ার হুমকি দেয়।
এ নিয়ে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেনের যৌন হয়রানিতে পূজা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। এছাড়াও সিনিয়র নার্স উম্মে হাবিবা সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেন। সে অভিযোগে জানা যায়, ২০১৬ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। তিনি অভিযোগে বলেন, ফাইজার ভ্যাকসিন দেয়ার কর্মসূচিতে সরকার ৮জন নার্সকে ২৪ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা প্রদান করেন। ৮জন নার্সকে বেলায়েত হোসেন ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা অফিস খরচ বাবদ কেটে রাখেন।
এ ছাড়াও তিনি ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে বিভ্রত করেন। অফিস অথবা ওয়ার্ডের কাজে বা তার অফিসে গেলে তার দৃষ্টিভঙ্গি আপত্তিকর কথা বার্তা শুনতে হয়। যার ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল নার্সরা অফিস রুমে যেতে ভয় পায়। পঃ পঃ কর্মকর্তার যৌন হয়রানীর কারণে নার্সরা হাসপাতালে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারছে না। চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত ও ভিডিও বক্তব্য সহ অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী নার্স উম্মে হাবিবা বলেন, পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেন আমার ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। যার ফলে আমার পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমি ফেসবুকে কোন পোস্ট করলেই তিনি বাজে মন্তব্য করায় পোস্টগুলো ডিলেট করতে বাধ্য হই। তাছাড়া তিনি সরাসরি আমাকে দেখলেও অশ্লীল ভাষায় মন্তব্য করেন। তিনি আমাদের নার্সদের ভ্যাকসিন দেয়ার টাকা অফিস খরচ দেখিয়ে নিজে তা আত্মসাৎ করেছেন। এসকল বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আমি চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ডা. মো. বেলায়েত হোসেন বলেন- আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ হয়েছে কিনা সেটা আমি জানি না। কিছুক্ষণ আগে সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসেছি, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলে নাই। হাসপাতালে এ ধরনের কোনো কর্মকাÐে আমি জড়িত নয়।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহাদাত হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি দৈনিক শপথকে জানান, আমার দপ্তরে হাইমচর থেকে দুটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেন সেই বিষয়ে আমরা অপেক্ষারত।