স্টাফ রিপোর্টার
একসময় দেড় দুইশ মন ধান হতো। বিশাল বাড়ি ছিলো। ফসলি জমি ছিলো। সব নদীতে তলিয়ে গেছে। শুধু নদীর পাশে ভিটা বাড়ি আছে। এখন মৌসুমি ফল ভর্তা বানিয়ে হকারি করি। ইতস্ত করে কি হবে এখন এ দিয়েই সংসার চলে। কথাগুলো অকপটে বলছিলেন, চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী গ্রামের নকুল বাড়ির মৃত অমৃত সরকারের ছেলে মনোজ সরকার।
মনোজরা পাঁচ ভাই এক বোন। এখন অবশ্য এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। থাকেন শহরের চৌদ্দ কোর্য়াটারে। ছেলে অষ্টম আর মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে। নিজে শুধু দস্তখত করতে জানেন। তাই ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করার আশা নিয়ে আমড়া, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, কাঁচা আম ভর্তা তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে হকারি করেন। কখনো কখনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাড়িয়ে দেয়। তখন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে বেঁচাবিক্রি করতে হয়। সম্প্রতি কথা সাপ্তাহিক শপথের এক প্রতিবেদকের সাথে।
মনোজ সরকার বলেন, আমরা নদী ভাংতি মানুষ। অনেক জমিজমা ছিলো। এখন কিছু নাই। জীবনে ইচ্ছে ছিলো বড় ব্যবসায়ী হবো। কিন্তু তা আর হলো কই? ১৬ বছর হলো হকারি করে সংসার চালাই। এক হাজার টাকা পূঁজি। এ দিয়ে প্রতিদিন যা লাভ হয় তা দিয়েই চলে সংসার। যদিও সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কি করবো? উপায়তো নাই। অনেক কষ্ট করে চলি। কিন্তু ঋণ নেই না।
যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন হাতে হাতে কাজও চলছিলো। চাকু দিয়ে আমড়ার চামড়া সরাচ্ছেন। তারপর কুচিকুচি করে মরিচ, লবন আর সরিসা বাটা দিয়ে বানিয়ে ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন।
মনোজ বলেন, অনেকেই আমাদের সাথে খুব সন্দরভাবে কথা বলে। আবার কেউ কেউ খুব বাজে আচরণ করে। কম দিয়েছি, কখনো লবন কম হয়েছে বা মরিচ বেশি হয়েছে বলে। মানুষ বুঝে না এ পেশা দিয়ে বাড়ি গাড়ি করা যাবে না। শুধু সংসারই চালাই। তাতেও যদি মানুষ ভাবে আমরা মানুষ ঠকাই তবেতো মনে কষ্ট হয়।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যেহেতু সাধ্য নাই। তাই এ পেশাতেই থাকতে চাই। অবশ্য আপাতত অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নাই বলে আমড়া কাটায় আরো মনোযোগ দেন মনোজ সরকার।