স্টাফ রিপোর্টার:
আমি সোনার হরিন ধরতে গিয়ে অনেক খেয়েছি ফন্দি, শেষে জানলাম মানুষ নিজেই ভাগ্যের কাছে বন্দি’- কালজয়ী এ জনপ্রিয় গানের কথার মতই চাঁদপুরের প্রতিবন্ধী মিন্টু একটা চাকুরির জন্য অনেক ফন্দিতে পড়ে ভাগ্যের জালে বন্দি হয়ে পড়েছেন। সে প্রতিবন্ধী কোটায় একাধিকবার ইন্টারভিউ দিয়েও আজও তার কপালে জোটেনি চাকরি নামের সোনার হরিণ। চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা বরং প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরী পাবার আশায় বিভিন্ন ফন্দিতে পড়ে নিজের সম্বল খুইয়ে হাতছাড়া করেছেন দেড় লাখ টাকা। এতেও আশার হাল ছাড়েনি প্রতিবন্ধী মিন্টু। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী কোটায় একটা চাকরির জন্য এখনো সে আশায় বুক বেঁধে আছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. মিজানুর রহমান মিন্টু (৩১) চাঁদপুর সদর উপজেলার উত্তর তরপুরচন্ডী গ্রামের নান্নু বন্দুকসীর ছেলে। পাঁচ বছর বয়সে যখন বন্ধুদের নিয়ে দুরন্তপনায় ছুটে চলার কথা ঠিক তখনই মিন্টু টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে মিন্টুর বাম পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে তার চলার শক্তি। কিন্তু থেমে থাকেনি তার পড়ালেখা। মা জ্যোৎ¯œা বেগম ও তার নিজ প্রচেষ্টায় কোনক্রমে স্কুলের অষ্টম শ্রেনীর গন্ডি পেরোয় সে। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতায় আর পড়ালেখায় বেশিদূর এগুতে পারেনি। থেমে যায় তার স্কুল জীবন।
কিন্তু থেমে থাকেনি তার সংসার জীবন। প্রায় ৮ বছর পূর্বে পারিবারিক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে হাসান বন্দুকসী নামে একপুত্র ও হালিমা আক্তার লিপি নামে এক কন্যা সন্তানের বাবা হয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে পঙ্গুত্বের কারণে হিমশিম খাচ্ছে সে। এরই মাঝে গত ৬/৭ বছর ধরে চাকরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
নিয়তির নির্মম পরিহাসে মিন্টু পঙ্গুত্বভোগ করে জীবন যাপন করলেও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতো ভিক্ষাবৃত্তি না করে তার মনের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে চাকরির মাধ্যমে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে চান। তাইতো চাকরি নামের সোনার হরিণের সান্নিধ্য না পেয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে তার মামা আবদুল কাজী টেলুর চায়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে করছেন। সেখান থেকে মাস শেষে যা মাইনে পান তা দিয়েই স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কোনরকম দিন পার করছেন।
মিন্টু জানায় গত ৮/৯ বছর ধরে সে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগে ও প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরির জন্য অন্তত ২০/৩০ বার আবেদন করেও জোটেনি ছোট্ট একটা চাকুরি। সে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা বিমান বন্দর সদর, সুপ্রীমকোট, চাঁদপুর সিভিল সার্জন, পরিবার-পরিকল্পনা, রেলওয়ে, চাঁদপুর ডিসি অফিসসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার ইন্টারভিউ দিয়েছি। কিন্তু তাতেও তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাই তার স্থানীয় সংসদসহ সকলের কাছে প্রশ্ন আর কত আবেদন করলে চাকুরি জুটবে প্রতিবন্ধী মিন্টুর।