বিল্লাল ঢালী :
রাইমা বেগম। বয়স আনুমানিক ত্রিশ। যদিও রাহিমার জন্ম দিন তারিখ কিছুই মনে নেই। ভ্যানের প্যাডেল চাপতে পাপতেঘুরে বেড়ান শহরের অলিগলি। প্যাডেল চাপছেন ঘুরছে ভ্যান গাড়ির চাকা। পাড়ি দিচ্ছেন ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে জীবনের আঁকাবাঁকা রাস্তা। ছোটবেলা থেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। রাস্তায় মানুষের বকাঝকা আর নানা অপবাদ সাথে নিয়ে পথ চলছেন নিত্যদিন। ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনে টোকাই কাজ করছেন ছোটবেলা থেকে।
ভাগ্যের সাথে যুদ্ধ ছোটবেলায় শুরু। বাবার নাম শাহজালাল। পেশায় মুদি দোকানদার। আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। বাবা বিয়ে করেছেন দুইটি। দ্বিতীয় বিয়ের পর তালাক দিয়েছেন প্রথম স্ত্রীকে। সে ঘরেরই বড় মেয়ে রাহিমা বেগম।
দুই হাজার সালের কথা রাইমা বেগমের বয়স ১০ বছর। সৎ মার অত্যাচার সইতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে চাঁদপুরে আগমন। সেই থেকে চাঁদপুরই তার ঠিকানা। চাঁদপুরে আসার পর হকার্স মার্কেটের সামনে রাস্তায় কাটতে থাকে দিন। বাবা-মা খোঁজ নেয়নি কেউ। মানুষের বকা সহ্য করে টোকাইর কাজ করে চলতে থাকে জীবন।
টোকাই কাজ করতে করতে সময় বয়ে চলে। ঘুরে বছর। বয়স বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন। টোকাই কাজ করতে করতে পরিচয় হয় আরিফ নামের একজন রিক্সা চালকের সাথে। পরিচয় থেকে প্রণয়। গড়ে ওঠে সংসার। এখন রাহিমা বেগম তিন সন্তানের জননী। বড় মেয়ে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে নানীর কাছে। মেজ সন্তান দেড় বছর বয়সে পানিতে পড়ে মারা যায়। কাজের খাতিরে বাইরে থাকতে হয় সারাদিন। তাই সন্তানের যতœ নেওয়া হয় না। ছোট সন্তানকে অন্য একজনের কাছে প্রতিপালনের জন্য দিয়ে রেখেছেন।
হতভাগী আমি, ছোটবেলায় পেলাম না মা বাবার আদর। সংসার করতাছি তারপরও দেখা নেই সুখের। জামাইডা বিয়া করছে দুইটা। আমি দ্বিতীয় বউ। খাওন খরচ দেয়, বাসা ভাড়া দেয় তা দিয়ে কোনরকম চলি। নিজে টোকাই কাজ করে যে টাকা পাই তা পোলাপাইন পড়ানোর পিছনে লাগে। আমার স্বপ্ন আমার পোলা আর মাইয়াডারে মাদ্রাসায় পড়ামু। কথাগুলো বলছিলেন রাইমা বেগম।
সরকার যা করে তা মানুষের ভালা লাইগাই করে। আমরা মানুষরাই ভালা না। আমরা যদি ভালো হইতাম তাইলে কারো কষ্ট থাকত না। করোনা সময় ঘরে বইয়া ছিলাম কেউ একটু খোঁজ নেয় নাই। শুনছি সরকার কত কিছুই দিছে। তাও ভাল্লাগছে। আমি না পাই কেউ তো পাইছে।