ইকবাল পারভেজ:
সাবুল আজ খুন হবে। এ খবরটা আর কেউ জানে না। যারা খুনে অংশগ্রহণ করবে তারাও জানে না। সাবুলই এ খুনের ভিকটিম ও একমাত্র সাক্ষী। মৃতব্যক্তির সাক্ষী হওয়ার ঘটনা বিরল দর্শন। সাবুল হত্যাকারীদের চেনে, দুইজনকে চেনে না। বাকী চারজন তার স্ত্রী দুই ছেলে ও ছেলেদের এক মামা। সাবুল কোনো ভাবেই বাকী দুজনকে চিনতে পারছে না। এদের কোথাও দেখেনি। কারো চেহারার সাথে মিলও খুঁজে পায় না।
সাবুল হত্যাকাণ্ড উপলক্ষ্যে কাবাব ও রুটি কিনে বাসায় ফিরছে। আজ সে বড় বিল পেয়েছে। একলক্ষ টাকা। কাবাব কেনার পর ফুলের তোড়া কিনেছে দরদাম করে। অযথা টাকার অপচয় সহ্য করে না। বাকী সবটাকা প্যান্টের পকেটে। হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক স্বরূপ রেখে দিয়েছে। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। সাবুল টাকার অংশভাগ করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে করেনি। পুলিশ কাগজ পেয়ে যাবে। কেলেঙ্কারি হবে। সাবুল চায় হত্যাকান্ডটি নিঁখুত হবে। পৃথিবীতে নাকি ক্লুবিহীন কোনো হত্যাকান্ড হয় না।
বাসায় ফিরে সাবুল দেখবে, ছেলেদের মামা না খেয়ে সোফায় শুয়ে আছেন। তিনি রিকশা ভরে বাজার নিয়ে আসেন। মাছ মাংস ফলফলারি নুডুলস কোক ইত্যাদি। সাবুলের সাথে তিনি খাবেন এবং জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিবেন। অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের তুলোধোনা করবেন। রান্নার প্রশংসা করতে ভুলেন না অবশ্য। খাবার টেবিল সবাই উপস্থিত থাকলেও স্ত্রী থাকে না সাবুলের। সিরিয়াল থেকে নিশ্চয় মাছ মাংস মজার হতে পারে না। আজ অবশ্য অন্য ব্যাপার। অদ্য দি লাস্ট সাফার!
যে যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়।ছেলেদের মামা ড্রয়িংরুমে শুয়ে থাকে। সাবুলের রুমমেট তার স্ত্রী। সিরিয়াল দেখে যাচ্ছে। দেখা শেষ হয় না। সাবুলের জন্য এটি সুবিধা। নির্ঘুম থাকা।ঘুমিয়ে গেলে হত্যাকান্ডটি শুরু হয়ে যাবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না। একসময় সাবুলের চোখজুড়ে ঘুম আসে।সে আর মৃত্যুকে ঠেকাতে পারে না।
ছেলেদের মা দরজায় টোকা পড়া মাত্র খুলে দেয়। অপরিচিত লোক দুটি ঘরে প্রবেশ করে। ছেলেরা নিজ নিজ রুম থেকে বের হয়ে আসে। সবাই সাবুলের রুমে অবস্থান নেয়। সে সবকিছু দেখতে পায়। কোনো বাঁধা দেয় না। সবাই মিলে সাবুলের দেহকে ছয় টুকরা করে ফেলে। সাবুলের খুব অবাক লাগে,সে কোনো ব্যাথা পায় না। তার দেহের টুকরাগুলো ফ্রিজে তুলে রাখে। এখন তার শীত শীত লাগছে। অপরিচিত লোক দুটি তার মস্তকখণ্ড একটি বস্তায় পুরে বের হয়ে যায়। সাবুল লোক দুটির পিঁছু পিঁছু হাঁটতে থাকে। লোক দুটি ব্রিজের উপর থেকে সাবুলের মস্তকখণ্ড ঝপাৎ করে ফেলে দেয়। ছলাৎ করে কিছু জল সাবুলের গায়ে এসে লাগে। মিতুর এ এক অদ্ভুত কাণ্ড, দরজা খুলে শাওয়ার নেয়।