স্টাফ রিপোর্টার:
আমি আমার স্বত্ত্বা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই আর এতেই আমার আত্মতৃপ্তি। আমি সাংস্কৃতি কর্মী। সাংস্কৃতি আমার ধ্যান জ্ঞান সংসার ধর্ম। আমি শিল্পী স্বত্ত্বার মাঝে আনন্দ খুঁজে পাই। তৃপ্তি পাই। আমি সরকারি সহায়তা পেতে চাই কিন্ত তা কেন অস্বচছল হিসেবে গন্য হবে কেন? সাংস্কৃতি কর্মী হিসেবে সরকারি যে অনুদান দেয় সেই সম্পর্কে আমি জানি। ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখি সেটিতে লিখা আছে অস্বচ্ছল সংস্কৃতিসেবী হতে হবে। আমি কেন অস্বচ্ছল শিল্পী হতে যাবো? শিল্পী তো অস্বচ্ছল হতে পারে না। যতদিন অস্বচ্ছল লিখা থাকবে ততদিন ঐ সহায়তার জন্য আবেদন করবো না। একজন শিল্পী হিসেবে হয়তো মনের খেদোক্তি থেকে“সাপ্তাহিত শপথ“ এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় কথাগুলো বলছিলেন জেলার কচুয়া উপজেলা বড় হায়াৎপুর গ্রামের সংস্কৃতিসেবী অপূর্ব লাল সরকার।
সম্প্রতিক সময়ে ঐ শিল্পীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলে ভিন্ন চিত্রের একটি পরিবারের। আজাপাড়াগাঁয়ে অযন্তে আর অবহেলায় পড়ে থাকা এই শিল্পীর বয়োবৃদ্ধ বাবা গোপাল চন্দ্র সরকার।ঘরের সামনের রুমে শুয়ে আছেন। মা বারান্ধায় বসে আছেন আর স্ত্রী সংসারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছোট দুটি শিশু সন্তান বাড়ির উঠানে খেলা করতে। কচুয়া শিল্পকলা একাডেমীর নিয়মিত বতলাবাদক এই শিল্পীকে বাড়িতে পাওয়া গেলো না। লোক পাঠিয়ে পুকুর পাড় থেকে খুঁজে আনা হলো।
বাড়ির উঠানে কয়েকটি চেয়ার আর টেবিল বিছিয়ে রেখে কথা বলতে গিয়ে কিছু সময়ের জন্য চলে গেলেন ঘরের ভিতরে। ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন হারমোনিয়াম হাতে করে। হারমোনিয়ামটি একটি টেবিলের উপর রেখে ফের ঘরে গিয়ে আনলেন তবলদ্বয়। এর পর এক এক আনলেন করে বাঁশের বাঁশি বেহলা সাথে বিশ্বকবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের কয়েকটি ছাপা পান্ডুলিপি। গুনি এই শিল্পী জানান, এই বাদ্য যন্ত্রগুলোর সবগুলো বেশ করে বাজাতে পারেন। এক পর্যায়ে এক এক করে ভিন্নভাবে হারমোনিয়াম, বাঁশি, তবল যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে উপস্থিত সবাইকে কয়েকটি গান গেয়ে শুনালেন।
নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে বলেন অনেকটাই খেই হারিয়ে ফেলেন। ডাবল ডিগ্রী পাশ এই শিল্পী শুধু শিল্পী স্বত্তাকে ধরে রাখার জন্য স্কুলের শিক্ষকতা চাকুরী ছেড়ে দেন। এক পর্যায়ে জানান, অনেক শখ আছে পরবর্তী প্রজন্মমের জন্য কিছু একটা করা। বিশেষ করে বাদ্য যন্ত্র ব্যবহারসহ আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে জিইয়ে রাখতে হবে। এক সময় কচুয়া বাজারে একটি গানের স্কুল চালু করেছিলেন। কিন্তু বিশেষ গোষ্ঠির কারনে তা বেশি দিন চালু রাখতে পারেননি।