তুহিন ফয়েজ/সুমন আহমেদ:
নিম্নচাপের কারণে গত শনিবার থেকে চাঁদপুরের সকল উপজেলায় অসময়ের বৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলায়। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে অসময়ে টানা বৃষ্টিপাতে আলু, পেঁয়াজ, শরিষা, ধানসহ গবাদি পশুর খাবার খড় বিনষ্ট হচ্ছে।
মতলব উত্তরে গত ৩দিন থেকে অবিরাম বৃষ্টির ফলে এলাকার শত শত বিঘা জমির আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় আমনচাষীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগাম শীতকালীন সবজি ও আলুচাষীরা। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলে ফসলের মাঠে পানি বেশি দিন জমে থাকতে পারবে না। তাই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম।
গত রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির ফলে ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি না হলেও উপজেলার শতাধিক হেক্টর জমির আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে এসব ধান কেটে ঘরে তুলতেন কৃষকেরা। এখন বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। অপরদিকে আগাম সবজি ও আলু চাষীদের মাথাঁয় হাত পড়েছে। বর্তমানে বাজারে আলুর দাম কম, তাই আগাম আলু করে লাভ করার আশায় এখন ক্ষতির মুখে তারা গ্রামের কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে মাঠ থেকে পাকা ধান অনেকেই কাটতে পারেন নি। কেউ মাড়াই দিয়ে ধান বের করেছেন, কেউ মাড়াই দেবার অপেক্ষায় সময় গুণছেন। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সময়ে যখন কৃষকরা মাঠ থেকে ধান কাটা ও ঘরে তোলা নিয়ে আনন্দের সময় কাটবেন ঠিক সেই সময়ে পাকা ধান নিয়ে অসময়ের টানা বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা।
তারা দাবি করেন, এই বৃষ্টিপাতের কারণে পাকা ধান গাছ মাটির সাথে মিশে যাবে এবং ব্যাপকহারে ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম আছে। ধান গাছের খড় নষ্ট হয়ে গবাদি পশুর খাবারে প্রভাব পড়বে। তাছাড়া জেলার মতলব দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ, মতলব উত্তর ও ফরিদগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকার কারণে শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ ব্যাপকহারে করা হয়েছে। বর্ষণের কারণে আমন ফসল ও শাক-সবজির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে বলে কৃষকরা জানান।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার কৃষক মিজান শেখ, মনির হোসেনসহ ক’জন কৃষক জানান, এখন আমন ফসল ঘরে তোলার এই সময়ে বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে থাকা ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ছে। বৃষ্টির পানির সাথে গাছ থেকে ধান ঝরে পড়ছে। তাছাড়া নিচু জমিতে পানি জমায় ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কৃষক মাহবুব, মিজান বলেন, টানা বৃষ্টিতে রোপনকৃত আলুর মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া টমেটো, সরিষা, পেঁয়াজ, করোলা, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, লাউ শাকসহ শীতকালীন শাক-সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বার বার ফসল ও সবজি ক্ষেতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
এছাড়া ইরি ও বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করা কয়েকজন কৃষক জানান, বৃষ্টি আরো কয়েকদিন থাকলে তাদের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে। নতুন করে আবার হয়তো বীজতলা তৈরি করতে হবে। যার কারণে খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে এবং বীজ সংগ্রহ করতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যে গভীর নিম্নচাপটি বয়ে যাচ্ছে, তার কারণে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারপর আবহাওয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলেও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য মতে, সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চতুর্দিকে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাটা ধান ও আলুসহ শাক-সবজির ক্ষতি সাধন হচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাত বন্ধ না হওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনও পুরোপুরি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ার পরে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সঠিকভাবে তথ্য দেয়া যাবে।