নজরুল ইসলাম আতিক :
চাঁদপুরের বুকে বয়ে চলেছে ডাকাতীয়া নদী। যে নদী পুরো চাঁদপুর জেলার মধ্যস্থল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীর রয়েছে নিজস্ব কিছু ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য। যা ধীরে ধীরে নষ্ট করছে একটি অসাধু চক্র। ইতোমধ্যে ডাকাতীয়া নদীর তীর থেকে প্রায় মাঝ নদী পর্যন্ত জাগের নামে দখল করে নিয়ে তারা। এতে করে নদী যেমন হারাচ্ছে তার নিজস্ব চিরচেনা রূপ তেমনি নদী তীরের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃতিক সুবিধা থেকে। বিশেষ করে নদীতে জাগ স্থাপন করায় বছরে একসাথে দুইবার মাছ ধরে তা বিক্রি করছে বৈধ জাগ মালিক পক্ষ। আর এ কারণে সাধারণ মানুষের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কারণ তারা নদীতে ইচ্ছে মতো মাছ ধরতে পারছে না। অতীতে ডাকাতীয়া ছিলো কিছু মানুষের জীবিকার আশ্রয়স্থল। তাদের সংসার চালানোর একমাত্র মাধ্যম ছিলো ডাকাতীয়ার বুকে মাছ ধরা। আবার ডাকাতীয়ার বুকও ছিলো মাছের অভয়াশ্রম। কিন্তু ডাকাতীয়ার বুকে বর্তমানে রয়েছে শত শত মাছের জাগ। আর এই সমস্ত জাগের কারণে নদীর ফাঁকা জায়গায় মাছ পাওয়া যায় না। এখন আর নদী দেখা যায় না, দেখা যায় শুধু জাগ আর জাগ।
বেশ কয়েকজন সাধারন মানুষের সাথে আলাপকালে তারা জানান, জাল মারার কোন জায়গাও খালি নেই এখন আর নদীতে। ইচ্ছে করলেই মাছ শিকার করা যায় না। একটু জাল মারার জন্য জায়গা খুঁজতে এখন কয়েক মাইল হাঁটতে হয়। নদীর পাড়ে বসতেও মন চায় না। কারন নদীর সেই আগের রূপ এখন আর দেখা যায় না।
স্থানীয়রা জাগ সম্পর্কে বলেন, নদীর বিভিন্ন এলাকায় নদীতে গাছের ঝোপঝাড়, গাছ ও বাঁশ দিয়ে একটা সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ওই সীমানার মধ্যে জলে ভাসতে থাকে কচুরিপানা। এরমাঝে বিভিন্ন খাবার দিয়ে মাছের আশ্রয়ের সুযোগ দেয়া হয়। মূলত মাছগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এই সমস্ত জাগে একত্রিত হয়ে আশ্রয় নেয়। সাথে মাঝে মাঝে খাবার জুটে। কিন্তু এসব জাগের মালিকরা বছরে ২-৩ বার জাগ ভেঙে মাছ ধরে। তাই এখন জাগের বাহিরের অংশে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। আর জাগের পরিমান এত বেশি যে সাধারন মানুষ যে একটু জাল ফেলে মাছ ধরবে সেই জায়গাটুকুও এখন আর অবশিষ্ট নেই।
আগে দেখা যেতো মানুষ অবসর সময় কাটানোর জন্য অনেক সময় নদীতে জাল মেরে বা বর্শিতে মাছ ধরতো। এতে মানুষের শখ পুরোনোর পাশাপাশি তাজা মাছ খাওয়ারও একটা আনন্দ পেতো। কিন্তু বর্তমানে ডাকাতীয়ার পাড় ঘুরে জাল মারার জন্য একটু জায়গা খুজে বের করাও অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আবার সারাদিন জাল মারলেও দুই একটি মাছ ধরা যায় কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাই এখন আর জাল মেরে বা বর্শিতে মাছ ধরার মানুষ দেখা যায় না।
সরেজমিনে বিভিন্ন জাগের ব্যাপারে খবর নিতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা ভিত্তিক হিসেবে প্রত্যেকটি এলাকায় বেশ কয়েকটি ঝাঁগের মালিক একজনই। বিশেষ করে এলাকার যারা মোটামোটি প্রভাবশালী তারা দখল করে নিয়েছে ওই এলাকার নদীর পাড়।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আসাদুল বাকীর সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, এসব অবৈধ জাগের বিরুদ্ধে করোনার আগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার কথা ছিলো। কিন্তু প্রাকৃতিক সংকটের কারণ তা আর করা হয়ে উঠেনি। তবে যে কোনো সময় এসব জাগ মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এসব জাগ উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।