সুমন আহমেদ:
মতলব ধনাগোদা নদীর দুই তীরে হাজারো জাগের কারণে বাড়ছে কচুরিপানার জট। মৎস্য আইনে এ সকল জাগ অবৈধ ঘোষণা করা হলেও মানছে না কেহই। এমনকি তা অপসারণেও নেই কোন পদক্ষেপ। যদিও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ধনাগোদা নদীতে থাকা এই জাগ অপসারণে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। অপরদিকে জেলা মৎস্য অফিস এগুলো উচ্ছেদের জন্য মৎস্য কর্মকর্তাদের আদেশ প্রদান করেই যেন রয়েছেন নিশ্চুপ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ ও চট্রগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম মুহিবুল্লাহসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৃহত্তর কুমিল্লা মৎস্য প্রকল্পের আওতায় মতলব দক্ষিণ উপজেলায় বাস্তবায়ধীন ও চলমান প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন। মহাপরিচালক মতলব সেতুর নিচে ধনাগোদা নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ পরিদর্শনে এসে নদীতে থাকা অবৈধ জাগ দেখতে পান।
ওই সময় তিনি মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে এই সকল জাগ দ্রæত উচ্ছেদ করার জন্য মৌখিক নিদের্শনা প্রদান করেন। মহাপরিচালকের ওই নিদের্শনাটি প্রকল্প পরিদর্শনকালে উপস্থিত চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমলে নিয়ে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর পত্র নং ৩৩.০২. ১৩০০. ৪০০.০১. ০০১.২০-১৯৮ মূলে একটি অফিস আদেশ জারি করেন। এতে বলা হয় যে, মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ মোতাবেক নদী ও খালে থাকা জাগ ও ভেসাল জাল দিয়ে মৎস্য আহরণ শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এই সকল জাগ ও ভেসাল জাল অপসারণের জন্য মৎস্যজীবি দলনেতাসহ নদীর তীরে মাইকিং, ওই সকল স্থাপনাকারীদের তালিকা তৈরি এবং স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য পত্র প্রেরণ করতে বলা হয়। সেই সাথে উপজেলা মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে আইনত ভাবে ওই সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য বলা হয়।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান ধনাগোদা নদীর আমিরাবাদ এলাকা থেকে কালিবাজার পর্যন্ত নদীর দুই তীরে রয়েছে হাজারো জাগ। এই জাগের কারণে মৎস্য রক্ষায় যেমন বিঘœ ঘটছে তেমনি ভাবে নদীতে চলাচলরত নৌ-যানের ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ জাগের কারণে নদীতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কচুরিপানার জট। এতে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার ও পণ্য পরিবহণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও নৌযান চালকদের।
নদীতে থাকা অবৈধ জাগ সম্পর্কে মতলব খেয়াঘাটের মাঝি লোকমান হোসেন বলেন, ‘নদীর জাগের লইগা কস্তুরী বড় নদীতে নামতে পারে না। সুদিনকাল (শুস্ক মৌসুম) আইলে কস্তুরির লইগা নাও (নৌকা) বাওন যায় না। নাও বাইতে না পারলে আমাগো সংসার চলে না। বহুত বার হুনছি নদীর জাগ সরাইয়া দিবো, কিন্তু দেয় নাই।’
মতলব রয়মননেছা মহিলা কলেজের ছাত্রী জয়া মজুমদার বলেন, আগে নদীতে এতো জাগ ছিলো না, দিনে দিনে এর সংখ্যা বাড়ছে। এতে নদীতে থাকা কচুরিপানার জট বৃদ্ধি পাচ্ছে। মতলব বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নদীতে থাকা এই সকল জাগ উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। নদীর পানি কমে এলে ওই সকল জাগের কারণে আটকে থাকা কচুরিপানার জন্য নদী পাড় হয়ে বাজারে আসা ক্রেতার সংখ্যা কমে যায়।
সাংবাদিক কবির মজুমদার বলেন, এটি সত্য যে নদীতে থাকা অবৈধ জাগের কারণে কচুরিপানার জট বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে এই সকল জাগের জন্যই মাছের প্রজনন ও সর্বজন মৎস্য আহরণ বিঘœ ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভাবে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও রহস্যজনক ভাবে জাগ অপসারণ হচ্ছে না, এর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।