নজরুল ইসলাম আতিক/এইচ.এম নিজাম:
মেঘনায় অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, নদী দূষণ, এবং নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে চাঁদপুরের মেঘনা চাহিদা মতো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমরা দেখেছি একটি জালে ১৮৭ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে। এতে বুঝা যায় ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ইলিশ আছে। চাঁদপুরে পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ না পাবার অন্যতম একটি অপরিকল্পিত নদী ড্রেজিং। এছাড়া বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ। ইলিশ চলাচলের প্রধান এই রুটটি তীব্র নাব্যতা সংকটে ভুগছে। নাব্যতা কতটা কমেছে তা প্রমাণের জন্য আপনারা শুধু ফেরিঘাট গুলোর অবস্থায় দেখুন। হরিনা ফেরি ঘাট, মাওয়া ফেরি ঘাটসহ যে সমস্ত ফেরি ঘাটগুলো রয়েছে সেগুলোতে নাব্যতার কারণে অনেক সময় ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষত নদী থেকে যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে তা পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। এই বালুকাটা শুধু ইলিশের ডিমের উপর ক্ষতিকর নয় মাছের পুরো বাস্তুতন্ত্রে আঘাত করে। শুধু ইলিশ নয় পদ্মা-মেঘনায় খেয়াল করলে দেখবেন অন্যান্য মাছের প্রাপ্যতাও কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, নদীতে পরিকল্পিত ড্রেজিং করা হলে দুই দিক দিয়ে উপকার পাওয়া যাবে। এক, নদী নাব্যতা ফিরে পাবে এবং ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’ এই স্লোগানকে ধারণ করে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে চাঁদপুরে সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময় সভায় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুর এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান এসব তথ্য তুলে ধরেন। গতকাল শনিবার সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় জেলেদের তালিকার হালনাগাদ, পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের প্রাপ্যতা ও মৎস্য উন্নয়নে বিশেষ আলোচনা করা হয়।
সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে চাঁদপুরের জেলেদের তালিকার হালনাগাদ জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জেলে হালনাগাদের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যাতে করে যে সমস্ত জেলে ইতিমধ্যে তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন বা মারা গেছেন তাদের কেউই যেন নতুন হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত না হয়। পাশাপাশি হালনাগাদ করার সময় এলাকার স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে যেন তালিকা তৈরি করা হয় তারও নির্দেশনা দেয়া আছে।
তিনি আরো বলেন, অভয়াশ্রম চলাকালে জেলেরা যদি অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকেন তাহলে তারা নদীতে নামবে না। যারা এই কাজে সম্পৃক্ত থাকেন তারাও তাদেরকে নদীতে নামতে উৎসাহিত করতে পারবে না। আমি কখনোই চাই না অসহায় এই মানুষগুলো কারাগারে থাকুক। কারণ তারা পেটের টানেই নদীতে নামতে বাধ্য হয়। আটককৃত জেলেদের ক্ষেত্রে আমার নির্দেশনা দেয়া আছে অভিযান শেষে তারা যখনই জামিন আবেদন করবে তাদেরকে যেন জামিন দিয়ে দেয়া হয়। কারণ তারা কিন্তু কোন ক্রিমিনাল নয়, জামিন না পেলে এই অসহায় মানুষগুলোর পরিবার পরিজন বিপাকে পড়ে। অনেক সময় জামিন নিতে ও পরিবারের সংসারের খরচ চালাতে তাদেরকে বিভিন্ন কিস্তি অথবা লোন নিতে হয়। যা তাদের জন্য পরিশোধ করা অনেক কষ্টসাধ্য। অতীতে আমরা দেখেছি কিছু কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি মা ইলিশ নিধন ও জাটকা নিধনের সাথে জড়িত। নদীতে অভয় আশ্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা কামনা করি।
তিনি বলেন, অভয় আশ্রম চলাকালে জেলেদের জন্য যে খাদ্য সহায়তা (চাল) দেয়া হয় তার পরিবর্তে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে আমি লিখিত সুপারিশ করেছি। তাদেরকে ১০ টাকা মূল্যের একটি একাউন্ট করে দেয়া হবে যে একাউন্টে সরাসরি তাদের কাছে টাকা পৌঁছে যাবে। কেননা জেলেরা অনেক সময় চাল নিতে অনেক হয়রানির শিকার হয় এবং অনেক সময় দেখা যায় সঠিক সময়ে তারা চাল সংগ্রহ করতে পারেন না। অভয়াশ্রমের ওই দুই মাস আমরা যদি তাদেরকে অন্য কোন কর্মসংস্থানের জন্য ট্রেনিং-এর আওতায় ব্যস্ত রাখতে পারি তাহলেই তারা নদীতে নামবে না। পাশাপাশি তাদের আরেকটি কাজ শেখা হয়ে যাবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ জেলায় কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ।