স্টাফ রিপোর্টর-
আমরাও রক্তে মাংসে মানুষ। শুধু আল্লার ইচ্ছায় আমরা অবহেলিত। আমাদেরও আবেগ অনুভূতি আছে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না। কথা গুলো বলছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ মুন্নি শিকদার (২৪)। মুন্নির বাড়ি রাজশাহী। বাবা লুৎফর রহমান আর মা সানোয়ারা বেগম। চারটা ভাই এক বোন আর আমি। নিজের ক্ষেত্রে ভাই বা বোন বলতে পারলো না শুধু আমি বলেছে মুন্নি। দুঃখবোধ শুধু এখানেই। অনেক প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে এইএসসির গন্ডি পার হতে পারলেও পড়ালেখা আর এগুতে পারেনি মুন্নি। রাজশাহীর আরানী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি আর স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে জিপিএ ২.৯০ আর এইসএসসিতে ২.৩০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় মুন্নি।
সম্প্রতি সাপ্তাহিক শপথ এর এ প্রতিবেকের সাথে আলাপ চারিতায় উঠে আসে জীবনের রূঢ় বাস্তবতার গল্প। মুন্নি এখন গাছতালায় এলাকায় থাকে তার সঙ্গী কারিনা হিজড়ার সাথে। সে ১০জুন চাঁদপুরে এসেছে। যখন অষ্টম শ্রেণীতে পাড়ে তখন সে বুঝতে পারে তার জীবন এক দুর্বিসহ কষ্টের।
মুন্নি বলেন, যখন পড়ালেখা করতাম। তখন ক্লাসের এক কর্ণারে বসতে হতো। ক্লাসে কেউ আমার সাথে বসতে চাইতো না। এজন্যে আমি খুব লজ্জাবোধ করতাম। আমি যখন বুঝতে পারি যে আমি আলাদা মানুষ। তখনি আমার মধ্যে সংকোচবোধ তৈরি হতে শুরু করে।
মুন্নি শিকদার বলেন, হিজরারা যে কাজগুলো করে এগুলো আমার ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ না। খেতে হয় বেঁচে থাকতে হয় তাই করতে বাধ্য হই।
স্কুল জীবনে একজনকে পছন্দ করতাম। কিন্তু আমার সীমাবদ্ধতার জন্যে প্রকাশ করতে পারিনি।এজন্যে আপসোস হয়। নিজে নিজে ভাবি যদি মেয়ে হতাম যেভাবেই হোক সংসার হতো কোনো না কোনো কিছু হতো। এখন সংসার নাই। বাবা মায়ের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় মনে বড় কষ্ট হয়।
আমাদের মতো মানুষদের বাবা মা মেনে নিতে পারে না। মেনে নেয় না। এটাই হচ্ছে আমার সবচে বড় কষ্ট। যদি তারা মেনে নিতো তবে একভাবে জীবন কাটিয়ে দিতাম। বাবা মা যদি মেনে নিতো তবে কোনো কষ্টই থাকতো নাই
জ্বর আসলে কপালে হাত দিয়ে দেখার কেউ নাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে মুন্নি শিকদার।
রান্না আর নাচতে পছন্দ করে মুন্নি। কিন্তু সে ইচ্ছেও কখনো পুরণ হবে না। আল্লার কাছে চাওয়া যদি নাচ বা রান্না করার সুযোগ হয় তবে সে খুব তৃপ্তি পেতো। মানুষ অনেক টাকা চায় অর্থ চায়। কিন্তু আমার টাকার দরকার নাই। শুধু জীবনের জন্যে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। যদি এতোটুকু সাধ্য থাকতো তবে মানুষের কাছে হাত পাততাম না যোগ করেন মুন্নি শিকদার।
মুন্নি শিকদার বলেন, জীবনের অনেক অতৃপ্তি আছে। যা মনের মধ্যে চেপে যাই। ভাগ্যকে দোষ দেই না, ভালো হলে ভালো হতো। এ প্রতিবেককে উদ্দশ্যে করে মুন্নি বলেন, আপনার প্রশ্নগুলোতে আমি বিব্রত হই। আমি এমন প্রশ্নের জবাব দিতে প্রস্তুত না। তবু দিলাম। কারণ অনেকেই আমাদের সম্পর্কে জানতে চায়। অথবা আমাদের দুঃখ সর্ম্পকে মানুষ জানে না। তারা আমাদের সাথে মাঝে মাঝেই খারাপ ব্যবহার করে। বিভিন্ন কমেন্টস করে, তখন আমি দাদা ভাই সোনা ভাই বলে সরে আসি। ভদ্রতা দেখিয়ে চলে আসি।
আজ,
মঙ্গলবার , ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।