নজরুল ইসলাম আতিক :
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে চাঁদপুরে অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী যেকোন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের পরিবেশগত ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক হলেও সংশ্লিষ্ট মালিকরা তা মানছেন না। সবাই গাছাড়া ভাব নিয়ে দিব্বি চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য খাতের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চাঁদপুরে মোট হাসপাতাল ৪৩টি ও ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার আছে ২৫৪টি। যার মধ্যে মাত্র ৭৪-৭৫ টির মত প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ টি ছাড়পত্রের জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। যা প্রক্রিয়াধীন। আবার দেখা যায় অনেকে শুরুর প্রাক্কালে যে ছাড়পত্র নিয়েছেন তা দিয়েই দীর্ঘদিন চালিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল তথা ক্লিনিকগুলো। পববর্তিতে তা আর নবায়ন করেননি। অথবা কেউ কেউ করার প্রয়োজন বোধ করেনি। শুধু তাই নয়, চাঁদপুরের অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে যেগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্রও নেয়নি। অপরদিকে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন র্কমকা- পরিচালনা করায় এখন অনেক টাকা জরিমান গুণতে হবে। যে কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এখন পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্যে আবেদন করতে নারাজ। বিভিন্ন ভাবে জরিমানার টাকা কমানোর জন্যে জোর চেষ্টা বা তদবির করে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা ব্যবসা সফল তাদের কোনো ভাবেই ছাড়া দিতে রাজি নয় পরিবেশ অধিদপ্তর। অবশ্য যেসকল ছোট ছোট ডায়াগণস্টিক সেন্টার অনেক বছর আগে চালু হলেও মাঝে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো সেসব ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করছেন কোনো কোনো প্যাথলজি ব্যবসায়ী। এছাড়া যেসকল প্রতিষ্ঠান শুরু আগেই তাদের সকল কাগজপত্র তৈরি করতে পারেনি সেসব প্যাথলজি বা ক্লিনিক কিভাবে অনুমোদন পেলো তা নিয়েও জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট তদারিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দিকে আঙুল তুলছেন।
সরেজমিনে বেশ কিছু ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক ঘুরে মালিক পক্ষের সাথে আলাপকালে উত্তর দেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। উত্তরগুলো ধরি মাছ নাই ছুই পানির মতো। অর্থাৎ সরকারি নীতিমালা না মানা অন্যায় কিন্তু তা স্বীকার করতে রাজি নয়। অথবা একটি প্রতিষ্ঠান করার আগে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়টিও তারা এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল লাগুয়া ইনসাফ ডিজিটাল এক্সরে এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার এর পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, আমাদের পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন করা হয়েছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে ছাড়পত্র হাতে পেয়ে যাবো। আমি নিয়মিত পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ রাখছি যেন দ্রুত আমাদের ছাড়পত্র হাতে পাই।
আজাদ এক্স-রে এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাব ইনচার্জ মোস্তফা কামাল জানান, আমাদের এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনেক পুরানো। আগে চাঁদপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অফিস ছিলো না। তাই আমাদের আর নবায়ন করা হয়নি। এখন আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত পরিবেশের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে। কিন্তু দীর্ঘ অনেক বছরের জরিমানা টাকাসহ নবায়ন করার কথা বলা হয়েছে যেটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য। তাই আমরা আবেদন করেছি কিছু টাকা মওকুপ করার জন্যে। যদি অধিদপ্তর আমাদের কোন ছাড় নাও দেয় তাহলেও আমরা খুব দ্রুত পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবো।
গ্রীন ভিউ এক্স-রে এন্ড ডায়াগনস্টি সেন্টারে গিয়ে আলাপকালে পরিচালকের পক্ষে তার ছোট ভাই শাহ-আলম জানান, আমাদের গত বছরের ছাড়পত্র আছে। ২০২০-২১ সালের জন্য আমাদের আবেদন করা আছে যেকোন সময় আমরা তা হাতে পাবো।
এছাড়া আরো বেশ কিছু ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিকদের সাথে আলাপ করলে তারা বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাব এড়িয়ে যান।
চাঁদপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ জানান, যে সমস্ত ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার তাদের পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করেননি আমরা তাদের সবাইকে নোটিশ পাঠিয়েছি। নোটিশ পেয়ে কিছু ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ তাদের ছাড়পত্রের জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগই এখনো আবেদন পত্র জমা দেয়নি। যেসকল বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। আমরা তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো।
আজ,
রবিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ৯ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।