রিয়াজ শাওন:
জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে বন সম্প্রসারণ, জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ, দারিদ্র বিমোচন ও বন্য প্রাণি সংরক্ষণ করে আধুনিক প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে বন, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন অধিদপ্তর গঠিত হয়। এমনকি বন বিভাগের কাজকে গতিশীল করতে সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়। কিন্তু চাঁদপুর পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ড খলিশাডুলিতে অবস্থিত কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ের কোন কর্মকর্তাকে অফিসে পাওয়া যায় না। প্রায়ই অফিস খালি থাকে। যদিও সংশ্লিষ্টদের দাবি, জনবল সংকটের কারণে তাদের সীমিত জনবল নিয়ে পুরো জেলার দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই তাদের অফিসের চাইতে মাঠ পর্যায়ে ও অন্যান্য উপজেলায় বেশি সময় অতিবাহিত করতে হয়।
এদিকে এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে দৈনিক শপথের অনুসন্ধানী সংবাদকর্মীরা বেশ কয়েকদিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অফিসে যায়। কিন্তু অফিসের কোন কর্মচারীরও দেখা মেলেনি। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ডিসেম্বর) অফিসে গিয়ে শুধুমাত্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী আহমেদ উল্লাহ ছাড়া আর কাউকে পায়নি এ প্রতিবেদক। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অফিসের অন্য কোন কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি।
অফিস সহকারী আহমেদ উল্লাহ বলেন, বড় স্যার ছুটিতে গেছে। কামরুল স্যার ট্রেনিংয়ে। বিল্লাল স্যার অফিসের কাজে বাহিরে। হিসাবরক্ষক স্যার অবসর নিয়েছেন। তাই আমি আছি অফিসে।
এদিকে জেলা অফিসে কর্মকর্তা না থাকায় জনগণের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। কোন কাজের জন্য যেতে হলে কর্মকর্তাদের আগে ফোনে যোগাযোগ করে যেতে হয়। না হয় কর্মকর্তাদের দেখা মেলে না। আবার যাদের কাছে কর্মকর্তাদের ফোন নাম্বার নেই তাদের পরতে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। একবারের কাজে আসতে হচ্ছে বেশ কয়েকবার। এদিকে অফিসে না থাকার কারণ হিসেবে তীব্র জনবলের সংকটের কথা বলছেন তারা। এতে দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া থাকতে হয় মাঠ পর্যায়ে। তাতেই অফিসে বসার সময় থাকে না হাতে।
জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম ছাড়াও এই অফিসে বসেন চাঁদপুর ও হাইমচর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফরেস্টার মোঃ বিল্লাহ হোসেন কাজী। মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফরেস্টার কামরুল হাসান। তবে তাদের কেউই নিয়মিত অফিসে আসেন না। অফিসে কোন কাজ না থাকায় একপ্রকার অলস সময় কাটান অফিস সহকারী আহমেদ উল্লাহ। যদিও অফিসে কোন কর্মকর্তাকে না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আগত অনেক সেবাগ্রহীতাদের।
চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ফরেস্টার মোঃ বিল্লাহ হোসেন কাজীর মুঠোফোনে অফিসে না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার দায়িত্ব আছি। একজন মানুষ দুই উপজেলার কাজ করতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা যদি কোন চিঠি লেখি সেটা নিজেরই পৌঁছে দিতে হয়। আমার কোন পিয়ন নাই। অফিসে জনবলের অনেক সংকট। মাঠে কাজ করতে হয় আমাদের। তাই অফিসে সব সময় বসতে পারি না। তবে জনগণের সেবা দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার মূলত হাইমচর উপজেলায় পোস্টিং। সদরের নিজস্ব কোন অফিস নাই তাই ওই অফিস গিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে বসি।
জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন মোঃ তাজুল ইসলাম। তিনি এর বাহিরেও হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
এই বিষয়ে জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, জনবল সংকটের কারণে একাধিক উপজেলার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয় আমাকে। তাছাড়া আমি শারীরিকভাবে গত কয়েক মাস যাবত অসুস্থ। এছাড়াও আমাদের অন্যান্য যারা দায়িত্বে আছেন তারা সবাই একাধিক উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন। যে কারণে প্রায়ই কর্মকর্তাদের বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াত করতে হয়। আর এতেই অনেক সময় অফিসে লোকবল সংকট থাকে। তবে সবাই তাদের কাজ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে থাকে বলে তারা অফিসে সময় দিতে পারেন না।